রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন পেতে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদনের সময়সীমা শেষ হতে বাকি আর এক সপ্তাহ। ২২ জুন শেষ হবে বর্ধিত সময়সীমার মেয়াদ। নিবন্ধন পেতে ইসির শর্ত পূরণের চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে তিন মাস আগে গঠিত হওয়া বিপ্লবীদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলীয় গঠনতন্ত্র, প্রতীক, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটি গঠনসহ সব প্রস্তুতি চলতি সপ্তাহের মধ্যেই সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছে দলটির কেন্দ্রীয় নেতারা। এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, চলতি সপ্তাহে দলীয় সাধারণ সভা আহ্বান করা হবে। সভায় গঠনতন্ত্র, প্রতীকসহ নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য বিষয় নিয়ে চূড়ান্ত পর্যায়ের আলোচনা হবে। নিবন্ধনের শর্ত পূরণে যেসব বিষয় রয়েছে তা সম্পন্ন করতে দলের একটি বিশেষায়িত টিম কাজ করছে। চলতি সপ্তাহের শেষ দিকে কিংবা আগামী ২২ জুন ইসিতে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবে এনসিপি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নিবন্ধন পেতে আগ্রহী রাজনৈতিক দলগুলোকে আবেদন করার জন্য গত ১০ মার্চ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে ইসি। আবেদনের সময়সীমা ছিল ২০ এপ্রিল পর্যন্ত। কিন্তু এনসিপিসহ কয়েকটি দলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সেই সময় দুই মাস বাড়িয়ে ২২ জুন নির্ধারণ করে ইসি। নতুন দলের নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ইসির শর্ত হলো- দলটির একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয় থাকতে হবে। কার্যকর কমিটি থাকতে হবে কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায়। সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা কিংবা মেট্রোপলিটন থানার কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থনের নথিও দেখাতে হবে।
নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনে বিদ্যমান বিধি অনুযায়ী ১০টি তথ্য আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। নিবন্ধন ফি হিসেবে দিতে হবে ৫ হাজার টাকা, যা ফেরতযোগ্য নয়। দলীয় প্যাডে দরখাস্তের সঙ্গে দলের গঠনতন্ত্র, নির্বাচনি ইশতেহার (যদি থাকে), দলের বিধিমালা (যদি থাকে), দলের লোগো ও দলীয় পতাকার ছবি, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্যের নামের তালিকা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও সর্বশেষ স্থিতি জমা দিতে হবে।
জমা দিতে হবে তহবিলের উৎস, দল নিবন্ধনের আবেদনকারীর ক্ষমতাপত্র, নিবন্ধন ফি বাবদ অফেরতযোগ্য ট্রেজারি চালানের কপি এবং নিবন্ধনের তিনটি শর্তের মধ্যে যে কোনো একটি পূরণের প্রমাণপত্র।
দলীয় সূত্র জানায়, নীতিগতভাবে একমত হওয়ায় ইতোমধ্যেই দলের সাধারণ সভায় অনুমোদন পেয়েছে খসড়া গঠনতন্ত্র। পরবর্তী সাধারণ সভায় দেওয়া হবে চূড়ান্ত অনুমোদন। গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান ও এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জাবেদ রাসিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একটি রক্তক্ষয়ী গণ অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক দল এনসিপির গঠনতন্ত্রে থাকবে নতুনত্ব। আমরা চেষ্টা করেছি, গতানুগতিকতার বাইরে গিয়ে ব্যতিক্রম একটি গঠনতন্ত্র প্রণয়নের। দলের অভ্যন্তরে গণতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখার উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে এনসিপির গঠনতন্ত্র। এক নেতাকেন্দ্রিক দল যেন হয়ে না ওঠে, সেটিও নিশ্চিত করা হয়েছে। আশা করছি, দেশের জনগণ এনসিপির গঠনতন্ত্রকে সাদরে গ্রহণ করবে। এনসিপির দলীয় প্রতীকের সংক্ষিপ্ত তালিকায় রয়েছে- মুষ্টিবদ্ধ হাত, দোয়াত-কলম, ল্যাপটপ, শাপলা, ইলিশসহ ‘পাঁচ-ছয়টি’ প্রতীক। এর মধ্যে যে কোনো একটিকে বেছে নেওয়া হবে। রাজধানীর বাংলামোটরের রূপায়ণ টাওয়ারের ১৫ তলায় জাতীয় নাগরিক কমিটির যে কার্যালয়টিকে এতকাল দলের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল সেটিকেই বেছে নেওয়া হতে পারে স্থায়ী কার্যালয় হিসেবে। এ ছাড়া একই ভবনের দ্বিতীয় তলায়ও এনসিপির যুব উইং ‘যুবশক্তি’র আরেকটি কার্যালয় রয়েছে। দলীয় কার্যালয় হিসেবে বেছে নেওয়া হতে পারে এটিকেও। ইসির চাহিদা অনুযায়ী জেলা পর্যায়ে ২২টি ও উপজেলা পর্যায়ে ১০০ দলীয় কমিটি ও কার্যালয় থাকার শর্ত পূরণের কাজ শেষের পথে রয়েছে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান দলটির নেতারা। এরই মধ্যে আমাদের ৩০টি জেলা কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। নিবন্ধনের আবেদন করার আগেই ১২০টি উপজেলায় কমিটি ঘোষণার কাজ শেষ হবে। দলের যুগ্ম সদস্য সচিব মুশফিক উস সালেহীন বলেন, নবীন রাজনৈতিক দল হিসেবে এনসিপির সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি- ইসির নিবন্ধন পাওয়া। দল আত্মপ্রকাশের পর আমরা সময় পেয়েছি মাত্র তিন মাস। মধ্যখানে রমজান, দুটি ঈদ উৎসবের ছুটি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাতে হয়েছে। ইসির নিবন্ধন পাওয়ার পর দলীয় কার্যক্রম আরও বেগবান হবে। সারা দেশে সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে মানুষের কাছে এনসিপিকে জনপ্রিয় করে তুলতে আমরা কাজ করব।