জুলাই গণ অভ্যুত্থানে স্বৈরাচার পতনের আন্দোলন দমনে কারফিউ জারির দশম দিন ছিল গত বছরের আজকের দিন। ছাত্র-জনতার ওপর রাষ্ট্রীয় বাহিনীর চালানো নির্বিচার গণহত্যার ক্ষোভ জনগণের ভিতরে সুপ্ত আগ্নেয়গিরির মতো জ্বলছিল। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে গত বছরের ২৯ জুলাই। ৯ দফা দাবিতে এদিন ফের বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায় রাস্তায় নামে ছাত্র-জনতা। আন্দোলনে নিহতদের প্রতি রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করে ৩০ জুলাই কালো ব্যাজ ধারণ করার কর্মসূচি ঘোষণা করে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার। বিপরীতে ওইদিন ‘নয় দফা দাবি আদায়ে একক বা ঐক্যবদ্ধভাবে লাল কাপড় মুখে ও চোখে বেঁধে ছবি তোলা এবং অনলাইনে প্রচার কর্মসূচি’ ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ২৯ জুলাই রাজধানীসহ সারা দেশে কঠোর অবস্থান নেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শুধু রাজধানীতেই অর্ধ শত শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। সায়েন্সল্যাব, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ নম্বর গেট, প্রেস ক্লাব, উত্তরার বিএনএস সেন্টার, মিরপুর-১০, ইসিবি চত্বর, রামপুরা ও মহাখালীতে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়। ছিল র্যাবের হেলিকপ্টারের টহল। বসানো হয় চেকপোস্ট। মাঠে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ। কোচিং করে আসা শিক্ষার্থী, পথচারী ও বাজারে যাওয়া যুবককেও আটক করে পুলিশ। এদিন বিকালে চট্টগ্রামের চেরাগী পাহাড় মোড়ে বেশকিছু নারী শিক্ষার্থীসহ কয়েক শ শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তাদের ওপর হামলা করে। ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। পুলিশ কয়েক শিক্ষার্থীকে আটক করে গাড়িতে তোলে। সহপাঠীদের ছাড়িয়ে নিতে প্রিজন ভ্যানের সামনে শুয়ে পড়ে শিক্ষার্থীরা। পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। আহত হন ১০ জন। ১৬ জনকে আটক করে পুলিশ। ২৯ জুলাই ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। কুমিল্লায় দেশি অস্ত্র হাতে মহড়া দেয় ছাত্রলীগ। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়-সংলগ্ন বিভিন্ন মোড়ে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ ব্যাট, লাঠি, রড, রামদা, পিস্তল নিয়ে মহড়া দেয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেলের মুক্তির দাবিতে এবং নয় দফা দাবি আদায়ে বিক্ষোভ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিল করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। জুলাই গণ অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আজ একাধিক কর্মসূচি পালন করবে দেশের রাজনৈতিক দলগুলো।