আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণায় দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। ইতিবাচক সাড়া পড়ে গেছে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোতে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাঁদের নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। শুরু করছেন আনুষ্ঠানিক প্রচারণা ও তৎপরতা। অনেকে নিজ নিজ এলাকার মসজিদ-মন্দিরে দোয়া ও প্রার্থনার মাধ্যমে তাঁদের নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করতে যাচ্ছেন। আজ ও আগামীকাল সরকারি ছুটি। সম্ভাব্য অনেক প্রার্থী এই দুই দিন এলাকায় কাটানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানা গেছে। ৫ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের জুলাই ঘোষণাপত্র ও জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণাকে ইতোমধ্যে স্বাগত জানিয়েছে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। এর মধ্যেই দলটি নির্বাচনি ট্রেনে ওঠার আনুষ্ঠানিক বার্তাও দিয়েছে। তবে জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও ইসলামী আন্দোলন জুলাই ঘোষণাপত্র ও নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণাসংক্রান্ত কিছু বিষয়ে মনঃক্ষুণ্ন হলেও দল তিনটির কোনোটিই জাতীয় নির্বাচনের ঘোষিত সময় নিয়ে আপত্তি করেনি। উপরন্তু তারা নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে।
গত মঙ্গলবার রাজধানীতে এক সমাবেশে ‘জুলাই ঘোষণাপত্র প্রকাশ ও জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা’ ঘোষণা করায় অন্তর্বর্তী সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। একই দিনে সংবাদ সম্মেলন করে দলের পক্ষ থেকে প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জনগণের অধিকার বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের এসব উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ভাষণে নির্দিষ্ট করে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের ঘোষণার বিষয়টিকে ‘ঐতিহাসিক’ আখ্যা দিয়ে বলেন, এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কেটে যাবে, গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সুগম করবে। বিএনপি আশা করছে, এই নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশন সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের সময় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এতটাই আশ্বস্ত হয়েছেন যে তাঁদের অনেকে আজ শুক্রবার (পবিত্র জুমা) থেকেই এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনি তৎপরতা শুরু করতে যাচ্ছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ আজ শুক্রবার তাঁর নির্বাচনি এলাকা মুন্সিগঞ্জ-২ (লৌহজং-টঙ্গিবাড়ী) এলাকায় মসজিদে জুমার নামাজ ও দোয়া-মোনাজাত শেষে এলাকার মুরুব্বিদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময়ের মাধ্যমে অনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করতে যাচ্ছেন। একইভাবে প্রচারণা শুরু করতে যাচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম। তিনি বাগেরহাট-৩ এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থী। এ ছাড়াও চাঁদপুর-৪ (ফরিদগঞ্জ) এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় সহ-তথ্য ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক এইচ এম সাইফ আলী খান তাঁর এলাকায় যাচ্ছেন আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু করতে। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনের কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম, কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনের শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল এবং কিশোরগঞ্জ-১ (হোসেনপুর-কিশোরগঞ্জ সদর) আসনের খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল (ভিপি সোহেল) একইভাবে আজ থেকে নিজ নিজ এলাকায় বাদ জুমা দোয়া ও মোনাজাত শেষে এলাকার মুরুব্বিদের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময়ের মাধ্যমে নির্বাচনি তৎপরতা শুরু করতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন। যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক শ্রী অমলেন্দু দাশ অপু এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থী এবং জাতীয়তাবাদী যুবদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের মহাসচিব শ্রীতরুণ দে তাঁর (সরাইল) এলাকায় মন্দিরে প্রার্থনার মাধ্যমে নতুন করে প্রচারণা শুরু করতে যাচ্ছেন বলে জানান। অন্যদিকে রাজধানীর ঢাকা-১৭ আসনে নির্বাচনি তৎপরতা শুরু করছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ।
এসব বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টার জাতীয় নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণার মধ্য দিয়ে সারা দেশে নির্বাচনি আমেজ তৈরি হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যেও একটা স্বস্তির ভাব দেখা দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে জনগণের মাঝে অঘোষিতভাবে যে একটা রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছিল- সেটা কেটে গেছে। দুয়েকটি দলের কতিপয় নেতার মধ্যে যে একটা হতাশা ভাব ছিল আশা করি সেটিও ধীরে ধীরে কেটে যাবে। ইতোমধ্যেই তাঁরা নির্বাচনি পরিবেশ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। আশা করি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর নেতৃত্বে সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আগামী মধ্য ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে উপহার দিতে সক্ষম হবেন।
অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের দলের পক্ষ থেকে বলেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার ক্ষেত্রে জামায়াতের কোনো আপত্তি নেই। তবে তার আগে নির্বাচনের জন্য ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ তৈরির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য নির্বাচনের উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্যসচিব আখতার হোসেন তাঁর দলের পক্ষ থেকে বলেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে সরকার যে সময়সীমার মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে চায়, তাতে এনসিপির আপত্তির কোনো জায়গা নেই। তবে নির্বাচনের আগেই সরকারকে মাঠপ্রশাসনের নিরপেক্ষতা এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে।
জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির নেতারা আরও আগে থেকেই দেশব্যাপী নানা সভা-সমাবেশের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে তাঁদের নিজ নিজ দলের নির্বাচনি প্রচারণা এবং ভোট চাওয়া শুরু করেছেন। ফলে দেশে এখন পুরো মাত্রা পেতে চলেছে জাতীয় নির্বাচনের আমেজ। নির্বাচনের স্বস্তির হাওয়া বইছে সর্বত্র।