সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ, বিধিনিষেধসহ সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে ভয়াবহ বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে নেপালে। গতকাল সকাল থেকে জেন-জিসহ বিক্ষুব্ধ জনতার এই বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণহানির সংখ্যা ২০ জনে পৌঁছেছে। এ ছাড়া আহত হয়েছেন শত শত বিক্ষোভকারী। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, গোটা নেপালে বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল। এ অবস্থায় মন্ত্রীসহ সব সরকারি দপ্তরের নিরাপত্তায় সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। কাঠমান্ডু পোস্ট, দ্য হিন্দু, এএফপি। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, সম্প্রতি নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলির নেতৃত্বাধীন সরকার ফেসবুক, ইউটিউব এবং এক্সসহ ২৬টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। এর প্রতিবাদে গতকাল রাজধানী কাঠমান্ডু থেকে সারা দেশে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সকালেই বিক্ষোভকারীরা পার্লামেন্ট চত্বরে ঢুকে পড়েন। তারা আরও ভিতরে ঢোকার সময় আগুন ধরিয়ে দিতে থাকেন। তখনই তাদের ওপর গুলির নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর পুলিশ এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করে। বিকালে পুলিশ জানায়, কিছু বিক্ষোভকারী পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ক্রুদ্ধ বিক্ষোভকারীরা কারফিউর বিধিনিষেধ ভেঙে পার্লামেন্টের কাছে সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে পড়ার পর নেপালের রাজধানীতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। এ ছাড়া পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাঠমান্ডু জেলা প্রশাসন কার্যালয় কারফিউর আওতাও বাড়িয়েছে। শুরুর দিকে কর্তৃপক্ষ কেবল রাজধানীর বানেশ্বর এলাকায় কারফিউ দিয়েছিল। সহিংসতার পর নতুন করে প্রেসিডেন্টের বাসভবন শীতল নিবাস, মহারাজগঞ্জের লাইনচুরে ভাইস প্রেসিডেন্টের বাসভবন, সিঙ্গা দুর্বার এলাকার সব অংশ, বালুওয়াটারে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ও সংলগ্ন এলাকায় কারফিউ জারি হয়েছে। প্রশাসন জানিয়েছে, অশান্তি ঠেকানো ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই কারফিউয়ের পরিধি বাড়ানো হয়েছে। রাজধানী কাঠমান্ডুর বিভিন্ন জেলায়ও কারফিউ জারি ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, বিক্ষোভ দমনে পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস এবং জলকামান নিক্ষেপ করেছে। স্থানীয় সময় বিকাল ৪টা পর্যন্ত পুলিশের গুলিতে অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কাঠমান্ডুর বিভিন্ন হাসপাতালের মধ্যে জাতীয় ট্রমা সেন্টারে আটজন, এভারেস্ট হাসপাতালে তিনজন, সিভিল হাসপাতালে তিনজন, কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজে দুজন ও ত্রিভুবন টিচিং হাসপাতালে একজন মারা যাওয়ার তথ্য এসেছে। সুনসারি ও ইটাহারিতে বিক্ষোভ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই বিক্ষোভকারী মারা গেছেন। কাঠমান্ডু পুলিশের মুখপাত্র শেখর খানাল বলেন, পুলিশ ও বিক্ষোভকারী প্রায় ১০০ জন আহতাবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন। আরেক খবরে বলা হয়েছে, রাজধানীর নিউ বানেশ্বরে প্রথমে বিক্ষোভ শুরু হয়। এরপর কাঠমান্ডু ছাড়াও পোখারা, বুটওয়াল, ভৈরহাওয়া, ভরতপুর, ইটাহারি, দামাকসহ বিভিন্ন শহরে তরুণ-তরুণীরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করেন।
 
কেন ফুঁসে উঠল নেপাল : নেপালে সরকারের বিরুদ্ধে প্রথমত ফুঁসে উঠেছে দেশটির শিক্ষার্থীরা। জেন-জি প্রজন্মের ভয়াবহ এই বিক্ষোভ এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশজুড়ে। জানা গেছে, সম্প্রতি নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এর ফলে গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে দেশটিতে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবসহ ২৬টি সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম বন্ধ রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্ত এবং সরকারের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মূলত ক্ষোভে ফুঁঁসে উঠেছে নেপালের জেন-জি প্রজন্ম। এর আগে, দেশটির সরকারি এক নোটিসে বলা হয়েছিল, আগস্ট ২৮ থেকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দেশে সচল সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে নিবন্ধন করতে হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে মেটা (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ), ইউটিউব, এক্স, রেডিট এবং লিংকডইনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউই আবেদন জমা দেয়নি। গত বছর নেপালের সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া এক নির্দেশনা অনুযায়ী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিবন্ধনের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয় দেশটির সরকার। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম কোম্পানিগুলোকে দেশটিতে নিজেদের অফিস এবং একজন অভিযোগ নিষ্পত্তি ও কমপ্লায়েন্স কর্মকর্তা নিয়োগ করতে বলা হয়েছিল। বর্তমানে টিকটক, ভাইবার, উইটক, নিম্বাস এবং পোপো লাইভ দেশটিতে নিবন্ধন করেছে। এসব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নেপালে সচল রয়েছে। এ ছাড়া টেলিগ্রাম ও গ্লোবাল ডায়েরির নিবন্ধনের আবেদন পর্যালোচনা করছে সরকার।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, নেপালে ফেসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় এক কোটি ৩৫ লাখ এবং ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী প্রায় ৩৬ লাখ। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করেন। নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ হওয়ার পর প্রথমে ক্ষতিগ্রস্তরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষেধাজ্ঞা-বিরোধী আন্দোলন থেকে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ : সরকারবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশি হামলায় নিহতের ঘটনায় পদত্যাগ করেছেন পনপালের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রমেশ লেখক। গতকাল সন্ধ্যায় তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। এতে বলা হয়, দেশটির প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির সরকারি বাসভবন বালুওয়াটারে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে পদত্যাগপত্র জমা দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
 
                         
                                     
                                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        