রাজধানীর রূপনগরে গার্মেন্ট ও কেমিক্যাল গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১৬ প্রাণ পুড়ে অঙ্গার হওয়ার পর আলোচনায় আসে গুদামটির মালিক শাহ আলম ওরফে আলমের নাম। বিশেষ করে অনুমোদন না নিয়ে ও ফায়ার সেফটি নিশ্চিত না করেই দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে কেমিক্যাল গুদাম পরিচালনার বিষয়টি অবাক করে সবাইকে। অথচ এ আলমই সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে ম্যানেজ করে অবৈধ উপায়ে কেমিক্যালের ব্যবসা করে বনে গেছেন গার্মেন্ট ও ওয়াশ ফ্যাক্টরির সম্রাট। অবৈধভাবে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। আর রূপনগরের শিয়ালবাড়ী যেন তার অঘোষিত সাম্রাজ্য। তার কেমিক্যালের ওপর নির্ভর করে চলে বিভিন্ন ওয়াশ ফ্যাক্টরি ও গার্মেন্টস। রূপনগরের শিয়ালবাড়ী এলাকায় গিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। এলাকাবাসী জানান, রূপনগরেই আলমের রয়েছে পাঁচটি বাড়ি, একটি ফ্লাট ও দুটি কেমিক্যাল গুদাম। একটিতে আগুন জ্বলছে, তার পাশেই আরেকটি রয়েছে। এ ছাড়া আশুলিয়ায় রয়েছে কেমিক্যালের আরও একটি গুদাম। এসব কেমিক্যাল তিনি রূপনগর এলাকা ছাড়াও গাবতলী, উত্তরা ও সাভারের বিভিন্ন ওয়াশ ফ্যাক্টরিতে সরবরাহ করেন। অনেক নাম করা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতেও তিনি কেমিক্যাল সরবরাহ করেন। ব্যবহার করেন একাধিক দামি গাড়িও। তার বাড়িগুলোর মধ্যে তিনটির খোঁজ পাওয়া গেছে। একটি রূপনগর আবাসিক এলাকার শিয়ালবাড়ী ৭ নম্বর রোডের ১১/১ নম্বরের ৬ তলা বাড়ি।
এ বাড়ির তিন তলায় স্ত্রী ও একমাত্র নাতিকে নিয়ে থাকেন তিনি। পাশের ৫ নম্বর রোডের ২১ নম্বর প্লটে দুই তলা বাড়ি ও ৬ নম্বর রোডের ১/১ নম্বরে দুই তলা বাড়িটিও তার। আর ৩ নম্বর রোডে যে গুদামে আগুন লেগেছে সেটির মালিকও তিনি। ওই গুদামের পাশেই তার আরেকটি গুদাম রয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে ২ নম্বর ও ৩ নম্বর রোডে প্রবেশে বন্ধ থাকায় আরেকটি গুদাম যাচাই করা সম্ভব হয়নি। ২, ৩ ও ৪ নম্বর রোডের একাধিক ওয়াশ ফ্যাক্টরির মালিক নাম না প্রকাশের শর্তে একাধিক গুদাম থাকার তথ্য জানিয়েছেন।
জানা গেছে, আলমের তিন মেয়ে। কয়েক বছর আগে তার ছেলে আলামীন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আলামীনের আট বছরের ছেলে বর্তমানে দাদা-দাদির সঙ্গে ৭ নম্বর রোডের তৃতীয় তলাতেই থাকে। আর ওই বাসার দ্বিতীয় তলায় এক মেয়ে ও মেয়ের জামাই বসবাস করে। ভবনটির অন্য ফ্লাটগুলো ভাড়া দেওয়া। তার ব্যবসায় সহযোগিতা করেন তার তিন মেয়ের জামাই। ছোট মেয়ের নাম তুলি। এক মেয়ে জামাইয়ের নাম ওবায়দুর। বড় মেয়ের জামাইকে মঙ্গলবার রাতেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আটক করেছে। বাড়িটির কেয়ারটেকার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার সকালে অসুস্থ স্ত্রীকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন বাড়ির মালিক শাহ আলম।
ডাক্তার দেখিয়ে ফেরার পর আগুনের খবর পেয়ে তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে যান। এরপর আর ফেরেননি। বাড়িটির পাশের এক দোকানদার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এ এলাকার সবচেয়ে নাম করা লোক উনি। সবাই জানে উনি খুব ক্ষমতাশালী লোক। উনার কয়েকটি বাড়ি ও কেমিক্যাল গুদাম রয়েছে এলাকাজুড়ে। তার ব্যবসা দেখভাল করে তার তিন মেয়ের স্বামী। ৫ নম্বর ও ৬ নম্বর রোডের বাড়িতেও আলাদা কেয়ারটেকার রাখা আছে।
এ দুই বাড়িতে অর্ধশতাধিক ছোট ছোট রুম রয়েছে। যেগুলোতে ভাড়াটিয়ারা প্রায় সবাই গার্মেন্টস ও ওয়াশ ফ্যাক্টরির কর্মচারী। কিছু আছে আলমের কেমিক্যাল গুদামের কর্মচারী।
বাড়ি দখল চেষ্টার অভিযোগ : ৫ নম্বর রোডে আলমের (২১ নম্বর) বাড়ির পাশের একটি বাড়ির মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তার প্রয়াত বাবা অবসরের আগে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। তার বাবা-মা মারা যাওয়ার পর ২০০৯ সাল থেকে তার বাড়িতে নজর পড়ে আলমের। তখন থেকেই নিজের কেমিক্যাল গুদামের শ্রমিকদের দিয়ে নানাভাবে হুমকিও দিতেন। তার বিরুদ্ধে আগে কয়েকবার থানায় অভিযোগও করেছিলেন। বিভিন্ন সময় শ্রমিক পাঠিয়ে আলম বলাতেন, আপনি মহিলা মানুষ, আলম সাহেবের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারবেন না। এ এলাকা আলম সাহেবের কথায় ওঠে-বসে। যে টাকা দিতে চাচ্ছে সেটি দিয়েই বাড়িটি দিয়ে দেন। এরপরও পৈতৃক সম্পত্তি আগলে রেখেছেন তিনি। ওই বাড়ির মালিক আরও অভিযোগ করে বলেন, তার পাশের আলমের বাড়িটিতে সবসময় বিভিন্ন কেমিক্যাল রাখা হয়। যেগুলো থেকে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।