মানবদেহের অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গসমূহ-ফুসফুস, হৃদপিণ্ড, খাদ্যনালি এবং শ্বাসনালি ইত্যাদির অবস্থান হচ্ছে মানুষের বুকে। আর এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আবৃত থাকে হাড় দিয়ে গঠিত পাঁজর দ্বারা। আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় অঙ্গসহ অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন নানা ধরনের অসুখ-বিসুখে আক্রান্ত হয় তেমনি বুকের পাঁজরের হাড়গুলোতেও বিবিধ রোগব্যাধির সৃষ্টি হয়ে থাকে। মানুষ সাধারণত বুকের পাঁজরের যেসব রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে সেগুলো হলো— বুকের খাঁচার একটি জটিল ও মারাত্মক ব্যাধি হচ্ছে কাইফোস্কেলিওসিস। এ ব্যাধির ফলে রোগী সামনে অথবা যে কোনো দিকে কাত হয়ে যায়। এসব রোগী সাধারণত জন্মগতভাবে এ রোগে আক্রান্ত হয়। এ ছাড়াও কারও যদি পোলিও মাইবাইটিস (মাংসপেশি ও স্নায়ুতন্ত্রের ব্যাধি), মেরুদণ্ডের হাড়ে যক্ষ্মা হয় বা হাড় ক্ষয় কিংবা এনকাইলোজিং স্পন্ডাইলাইটিস হয় তবে সেসব ব্যক্তিরও এ ব্যাধি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বৃদ্ধ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে অনেক সময় বিভিন্ন বক্ষের ব্যাধির কারণে বুকের হাড়ের ক্ষয় হয়। যেমন— ফুসফুসের ক্যান্সারজনিত কারণে বয়স্ক লোকদের বুকের হাড় এক সময় ক্ষয় হয়ে যায়। মানুষের শরীরের কোনো অংশ যদি ক্যান্সার দ্বারা আক্রান্ত হয় তবে ক্যান্সারের কোষ বুকের পাঁজরে জমা হতে হতে বুকের হাড় খেয়ে ফেলে।
ডায়াবেটিস হলে কিংবা স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ অনেক দিন সেবনের ফলেও বুকের হাড়ের ক্ষয় হতে পারে। কোনো আঘাত বা সড়ক দুর্ঘটনার কারণেও বুকের হাড় ভেঙে যেতে পারে। শরীরের অন্য কোনো হাড় ভাঙলে তা প্লাস্টার করা গেলেও বুকের হাড় ভাঙলে তা প্লাস্টার করা সম্ভব নয়। শিশুদের ক্ষেত্রে বুকের খাঁচার যে ব্যাধিটি হয় সেটি হচ্ছে পিজিয়ন চেস্ট বা পেকটাস কেরিনেটাম, এটি হয় সাধারণত শিশু দীর্ঘদিন হাঁপানিতে আক্রান্ত থাকার ফলে এক সময় তাদের বুকের দিকটা কবুতরের বুকের মতো হয়ে যায়। ভিটামিন ডি এর অভাবজনিত রোগ রিকেটের কারণেও শিশুদের এ সমস্যা হয়ে থাকে। ফানেল চেস্ট নামক এক ধরনের বুকের পাঁজরের ব্যাধি রয়েছে। এর ফলে মানবদেহের বুকের দিকটা ফানেলের ন্যায় হয়ে যায়। বুকের হাড়ের আরেকটি ব্যাধি হচ্ছে ‘রিকেট রোজারি’। আমাদের দেহের গুরুত্বপূর্ণ চাবিকাঠিগুলো প্রতিরক্ষা করছে বুকের খাঁচা। তাই বুকের পাঁজর হচ্ছে মানুষের শরীরের প্রয়োজনীয় অংশ। বুকের পাঁজরে যদি কোনো ব্যাধির সৃষ্টি হয় তবে তার প্রভাব দেহের অন্যান্য অংশেও পড়ে।
লেখক : অ্যাজমা ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ
মেডিনোভা, মালিবাগ, ঢাকা।
