শনিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

মাতৃত্বকালীন হৃৎপিন্ডের মাংসপেশির যত রোগ

মাতৃত্বকালীন হৃৎপিন্ডের মাংসপেশির যত রোগ

হৃদরোগ বলতে হৃৎপিন্ডের রক্তনালিসহ অন্ত:প্রাচীরের পর্দার ভিতরে চর্বি জমা (cholesterol deposition under intima) বা রক্তনালিসহ মাংস কোষের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার ফলে (smooth muscle cell proliferation), রক্তনালির অন্তপ্রকোষ্ঠের নালার (lumen) সরু হওয়ার ফলে মাংসপেশিতে (myocardium) প্রয়োজনীয় অক্সিজেন ও রক্ত সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে যা হৃদযন্ত্রের প্রদাহ তৈরি করে। জন্মগত বা প্রকৃতিগতভাবে পুরুষের চেয়ে নারীরা কম ঝুঁকিতে থাকেন বিশেষ করে ঋতুস্রাব বন্ধ (menopause) হওয়া পর্যন্ত। অর্থাৎ ৪০-৪৫ বছর বয়স পর্যন্ত মহিলাদের হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা কম থাকে। তবে মাতৃত্বকালীন বা গর্ভাবস্থায় হৃৎপিন্ডের রক্তনালির অন্তর দেয়ালে ফাটল (spontaneous coronary artery dissection), রক্তনালির অস্বাভাবিক ফুলে যাওয়া (takotsubo disease), হদযন্ত্রের মাংসপেশির দেয়াল ফুলে বড় হয়ে দুর্বল হওয়া (peripartum or postpartum cardiom -yopathy) উল্লেখযোগ্য! এই তিন রোগকেই Broken Heart Syndrome বলা হয়। Spontaneous Coronary artery dissection ফলে গর্ভবতী মা বুকে অস্বাভাবিক প্রদাহ ও সঙ্গে শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকেন। উপসর্গ অনেকটা হার্ট অ্যাটাকের মতোই বুকে ব্যথা অনুভব করেন। পুরুষ মহিলা নির্বিশেষে ১%-৪% ও শুধু ৫০-এর নিচের মহিলাদের ক্ষেত্রে শতকরা ৩৫% বা হার্ট অ্যাটাকের কারণ হয়ে থাকে এবং ৪৩% গর্ভবতী মা এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। গর্ভকালীন দুশ্চিন্তা, শারীরিক ও মানসিক চাপ রক্তনালিতে dissection করে, এতে করে হৃৎপিন্ডের মাংসপেশিতে প্রদাহ তৈরি করে। তিনটি মূল রক্তনালির যে কোনোটাই আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে খঅউ বাঁদিকের মূল রক্তনালি 32-46%, LAD, Diagonal I Septal 45-61%, LCX, Ramus , OM 10-39%, LM বা বাঁয়ের মূল রক্তনালির মুখের অংশ ৪% আক্রান্ত হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সবগুলোই আক্রান্ত হতে পারে। রোগী ভর্তি হয়ে যে প্রতিষ্ঠানে করোনারি এনজিওগ্রাম সুবিধা আছে তাতে আক্রান্ত রক্তনালিতে Stent বা রিং বসিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে। যেখানে সুবিধা নেই সেখানে প্রতিরোধমূলক (prophylactic) চিকিৎসা দেওয়া উত্তম; কেননা তাতে করে অনাকাক্সিক্ষত রক্তক্ষরণ বা মাতৃগর্ভস্থিত শিশুর ওপর ক্ষতিকর প্রভাব হতে মা ও শিশুকে রক্ষা করা যেতে পারে। গর্ভকালীন  সময় হার্টের মাংসপেশির ফুলে যাওয়ার ফলে প্রকোষ্ট অস্বাভাবিক বৃদ্ধি  হওয়া (cardiomyopathy) যা সাধারণত সন্তান প্রসবের এক মাস আগে ও পরের ছয় মাসে হয়ে থাকে। এর ফলে হার্ট নির্দিষ্ট পরিমাপে রক্ত পাম্প করতে না পারার ফলে হার্ট ফেইলিওর হতে পারে, এতে করে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত কম সরবরাহের ফলে হৃৎপিন্ডের মাংশপেশির প্রদাহ তথা ফুসফুসে ও পায়ে পানি জমা ও শ্বাসকষ্ট, অল্পে হাঁপিয়ে উঠতে পারেন। অবসাদ অনুভব করা, বুক ধড়পড় করা, রাতে ঘন ঘন প্রস্রাব, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট অনুভব, পায়ের গোড়ালিতে পানি জমা ও রক্তচাপ কমে আসা। তবে অধিকাংশ রোগী ৫০-৬০% প্রথমেই রোগের নির্ণয় ও যথাবিহীত ডাক্তারের পরামর্শে তিন-ছয় মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন। কিছু ওষুধ, সহজে হজম হয় এমন খাবার, ০.৮-১.০ লিটার বা ৪ গ্লাস পানি বা তরল খাবার, সহনীয় মাত্রায় হাঁটা চলাফেরা করা ও নিয়মিত চেকআপ সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে সহায়তা করে। ঋতস্রাব বন্ধের ঠিক আগে বা পরে Takotsubo heart disease যা কিনা হার্টের মাংসপেশিতে ক্ষত তৈরি করে বেলুনের মতো ফুলে ওঠে। মানসিক চাপ ও হরমোনের তারতম্যের কারণে। উল্লেখ্য যথাসময়ে ও তাড়তাড়ি রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসকের পরামর্শে সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব। এছাড়া পরিবারের সবার বিশেষ করে পুরুষদের

(guardian) মানসিক সাপোর্ট অতীব জরুরি! সব সময় স্ত্রীকে বোঝা তার পাশে থেকে আশ্বস্ত করা অন্যতম সহায়ক হয়ে উঠতে পারে উপরোল্লেখিত তিন রোগ থেকে পুরোপুরি ভালো হয়ে উঠতে। তাই সচেতন হতে হবে।

অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম ওয়ালিউল ইসলাম

ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট

এ্যাপোলো হসপিটালস, ঢাকা

সর্বশেষ খবর