বালকের যদি ১৪ বছর বয়সেও অন্ডকোষের আয়তন ৪ মিলিমিটারের বেশি না হয়, অথবা অন্ডকোষের অনুপস্থিতি থাকে, বৃদ্ধিপ্রাপ্ত না হয় এবং বয়ঃসন্ধিকালীন পরিবর্তন অনুপস্থিত থাকে, তাহলে বালকের ক্ষেত্রে ১৪ বছরের পর বিলম্বিত বয়ঃসন্ধি বলা হবে। এ সময়ের মধ্যেই ৯৫% শতাংশ বালক যৌবন প্রাপ্তি সম্পন্ন হয়।
প্রকারভেদ : প্রাইমারি হায়পারগোনা-ডোট্রপিক হায়পোগোনাডিজম : অন্ডকোষ বা ডিম্বাশয়ের সমস্যা এর মূল কারণ। এক্ষেত্রে গোনাড : (অন্ডকোষ বা ডিম্বাশয়) প্রয়োজনীয় যৌন হরমোন তৈরিতে ব্যর্থ হয়। এর পেছনে ক্রমোজোমাল ত্রুটি (টার্নার সিনড্রোম, ক্লিনেফিল্টার সিনড্রোম ইত্যাদি) এর হাত থাকতে পারে। আবার টেস্টোস্টেরন হরমোনের ত্রুটিও থাকতে পারে। খুব কম করে হলেও, কিছু কিছু বালক-বালিকার গোনার্টি ঠিকমতো তৈরিই হয় না।
হায়পোগোনাডোট্রপিক হায়পোগোনাডিজম : হায়পোথ্যালামাস বা পিটুইটারিতে প্রধান সমস্যাটি থাকে। বিলম্বিত বয়ঃসন্ধিকালে বালকরা প্রধানত তাদের বাবা-মার সঙ্গে হরমোন বিশেষজ্ঞের কাছে হাজির হন। অভিভাবকরা তাদের ছেলেদের যৌবন প্রাপ্তি না হওয়ায় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হন এবং চিকিৎসককে তা জানান। এ ছেলেদের অধিকাংশেরই দৈহিক উচ্চতা কাক্সিক্ষত মাত্রার চেয়ে অনেক কম থাকে। রোগী নিজে বা অভিভাবকরা সুনির্দিষ্টভাবে কোনো সমস্যা উপস্থাপন নাও করতে পারেন; বিশেষ করে ছেলেদের ক্ষেত্রে; বয়ঃসন্ধিকালে প্রবেশে সব পরিবর্তন অনুপস্থিত থাকে। ছেলেদের দাড়ি-গোঁফ গজায় না, দৈহিক গঠনের পুরুষালি ভাব হয় না, লিঙ্গের আকার ছোট থাকে, লোম ও ঘামের কাক্সিক্ষত পরিবর্তনও অনুপস্থিত থাকে।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা : প্রথমেই বর্তমানে বালক বা বালিকাটির দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভুগছে কিনা, সেটি নিশ্চিত হতে হবে। এ ধরনের রোগ অনেক ক্ষেত্রেই বালকটির দেহে বসবাসের সম্ভাবনা আছে। এরপর পরিবারের সদস্যদের বিশেষ করে বাবা বা ভাইয়ের দৈহিক বৃদ্ধির সঙ্গে সমন্বয় করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরিকল্পনা শুরু করতে হবে। বয়ঃসন্ধিকালের লক্ষণগুলোর অনুপস্থিতি পরিমাপের জন্য পৃথিবীব্যাপী স্বীকৃত পদ্ধতি হলো-ট্যানার স্ট্যাজিং; দৈহিক উচ্চতার পরিমাপ অবশ্যই নিতে হবে। রক্তের গ্রোথ হরমোন মাপলে অনেক সময় কম পাওয়া যেতে পারে; গ্লুকোকর্টিকয়েড মাপলে পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে। দেহের ওপর ও নিচের অংশের অনুপাতও জেনে নিতে হবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলোর মধ্যে রক্তের টেস্টোস্টেরন (ছেলেদের জন্য), এফএসএইচ ইত্যাদির মাত্রা দেখতে হবে। অধিকাংশ বিলম্বিত বয়ঃসন্ধির বালকদের ধীরগতিতে দৈহিক বৃদ্ধি এবং তা দেরিতে হলেও অনেকটা স্বাভাবিকের কাছাকাছি পৌঁছে। ছেলেদের ক্ষেত্রে বেশি ঘটে।
-ডা. শাহজাদা সেলিম, সহযোগী অধ্যাপক এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বিএসএমএমইউ।