চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে দেশের ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো সবুজ ও টেকসই অর্থায়নে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা ও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে ঋণ বিতরণে নতুন করে জোর দিচ্ছে আর্থিক খাত। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে সবুজ অর্থায়ন দাঁড়িয়েছে ৮৭ হাজার ৬৩ কোটি টাকায়, যা গত বছরের একই সময়ের ৭২ হাজার ৪০ কোটি টাকার তুলনায় ২১ শতাংশ বেশি। আগের ত্রৈমাসিকের তুলনায় এটি ১ দশমিক ৩৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
অন্যদিকে টেকসই অর্থায়নে আরও বড় ধরনের উল্লম্ফন দেখা গেছে। জানুয়ারি-মার্চ সময়ে টেকসই অর্থায়ন ছাড় হয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকারও বেশি, যা গত বছরের একই সময়ের ৮ লাখ ৮৬ হাজার ৯৭ কোটি টাকার তুলনায় প্রায় ৬৯ শতাংশ বেশি। ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা। বিশ্লেষকরা বলছেন, বার্ষিক প্রবৃদ্ধির এ ধারা নির্দেশ করে যে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ক্রমশ সবুজ ও টেকসই খাতে তাদের প্রতিশ্রুতি বাড়াচ্ছে। এর পেছনে নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাপ, পরিবেশ, সামাজিক ও সুশাসন মানদণ্ডে বাড়তি গুরুত্ব এবং বেসরকারি খাতের চাহিদা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৫ সালের জন্য সবুজ অর্থায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ৬৭ হাজার ৮২১ কোটি টাকা এবং টেকসই অর্থায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ৫ লাখ ৪৩ হাজার কোটি টাকা। আগামী বছর থেকে ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তাদের মোট ঋণ ও অগ্রিমের যথাক্রমে ৫ শতাংশ ও ৪০ শতাংশ সবুজ ও টেকসই অর্থায়নে বরাদ্দ দিতে হবে।
ইনস্টিটিউট ফর এনার্জি ইকোনমিক্স অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল অ্যানালাইসিস (আইইইএফএ)-এর বাংলাদেশ বিষয়ক জ্বালানি বিশ্লেষক শফিকুল আলম বলেন, উদ্যোক্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধি এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সবুজ ও টেকসই প্রকল্পে অর্থায়নের গুরুত্ব অনুধাবনের কারণে এ প্রবৃদ্ধি এসেছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সবুজ ও টেকসই অর্থায়নের বাধ্যতামূলক লক্ষ্য নির্ধারণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ খাতে ঋণ বিতরণে আরও উৎসাহিত করেছে। বিশেষ করে টেকসই অর্থায়ন নীতিমালা বাস্তবায়নের ফলে ব্যাংকগুলো অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সবুজ প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখার সুযোগ পাচ্ছে।’ শফিকুল আলম আরও জানান, দেশে সবুজ শিল্পের সংখ্যা বাড়ছে। এসব শিল্পের জন্য প্রাথমিক মূলধন দরকার হয়, যা সামগ্রিকভাবে টেকসই অর্থায়নের অংশকে বড় করছে।