চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বাংলাদেশে চাল আমদানি ব্যয় বেড়েছে ৫৫ গুণ, যা প্রায় রেকর্ড পর্যায়ের বৃদ্ধি। শুল্ক ছাড় ও ভারতে দাম কমে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে চাল আমদানি শুরু করেছেন। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, এভাবে আমদানি বাড়তে থাকলে কৃষক শিগগিরই ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতে পারেন, বিশেষ করে যখন সরকারি চাল সংগ্রহ ইতোমধ্যে সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে এবং নতুন আমন মৌসুমের ফসলও ঘরে ওঠার অপেক্ষায়।
শুল্কহার কমে মাত্র ২ শতাংশ : সাধারণত চাল আমদানিতে প্রায় ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়, যা স্থানীয় কৃষকদের স্বার্থরক্ষায় একটি মূল্যসমর্থন নীতি হিসেবে কাজ করে। কিন্তু বাজারে মূল্য স্থিতিশীল রাখতে সরকার সম্প্রতি শুল্কহার কমিয়ে মাত্র ২ শতাংশে নামিয়ে এনেছে। এই শুল্ক ছাড়ের পর থেকেই বেসরকারি খাত চাল আমদানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সরকারি পর্যায়ে এখনো আমদানি শুরু হয়নি। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে চাল আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল মাত্র ১০ লাখ ডলার।
ভারতের দামের কারণে আমদানি আকর্ষণীয় : খাদ্য অধিদপ্তরের ক্রয় পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, এ বছর ভারতে চালের দাম তুলনামূলকভাবে কম থাকায় আমদানির আগ্রহ বেড়েছে। ভারতে চালের দাম সস্তা ছিল, সেটিই আমদানির এমন ঊর্ধ্বগতির মূল কারণ, বলেন তিনি। তিনি আরও জানান, সরকারি পর্যায়ে ৫০ হাজার টন চাল আমদানির একটি চুক্তি চূড়ান্তের পথে রয়েছে। এখন পর্যন্ত পুরো আমদানিই বেসরকারি খাতের মাধ্যমে হচ্ছে, যোগ করেন তিনি।
উত্তরাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা এগিয়ে : উত্তরবঙ্গের দিনাজপুর, রংপুর ও বগুড়ার ব্যবসায়ীরা আমদানিতে সবচেয়ে বেশি সক্রিয়। দিনাজপুরের এক আমদানিকারক বলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠান কমানো শুল্কহার কাজে লাগিয়ে ভারত থেকে চাল এনেছে। এখন শুল্ক মাত্র ২ শতাংশ, আর ভারতে নন-বাসমতি চালের দামও কম তাই আমদানি এখন লাভজনক ব্যবসা, বলেন তিনি।
সরকারের সংগ্রহ লক্ষ্য ও ভারতীয় রপ্তানি : খাদ্য অধিদপ্তর চলতি অর্থবছরে ৯ লাখ টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, যা সরকারি খাদ্য মজুত পূরণের অংশ। ভারত, যারা আগে চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, তারা আগস্টে বাংলাদেশে চাল রপ্তানির ওপর থেকে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়। বিশেষ ব্যবস্থায় নন-বাসমতি চাল রপ্তানির অনুমতি দেওয়ার পর, ঢাকা সরকার প্রায় ৫ লাখ টন চাল শুল্কমুক্তভাবে আমদানির অনুমোদন দেয়, যাতে বাজারে দাম কমে এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে।
অর্থনীতিবিদদের সতর্কবার্তা : তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত স্বল্পমেয়াদে বাজার স্থিতিশীল রাখলেও, দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব নেতিবাচক হতে পারে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সরকারি সংস্থার দেশীয় চাল সংগ্রহ সন্তোষজনকভাবে চলছে, কিন্তু অতিরিক্ত আমদানি নির্ভরতা কৃষকদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি ও অভ্যন্তরীণ উৎপাদন- দুই ক্ষেত্রেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।