নগ্নতার অভিযোগে ভিয়েতনাম যুদ্ধে বোমায় আহত এক শিশুর মানবিক ছবি সরিয়ে নিয়েছিল ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। তবে ব্যাপক সমালোচনার মুখে ছবিটি আবার ফিরিয়ে এনেছে তারা।
কি ছিল সেই ছবিতে? যার কারণে সরিয়ে নিতে হল ফেসবুক থেকে। সমালোচনার মুখে আবার তা ফিরিয়েও আনা হল? ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় তোলা ওই ছবিটি সে সময় বিশ্বজুড়ে হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, নাপাম বোমায় পুড়ে যাওয়া নয় বছরের এক নগ্ন মেয়ে রাস্তা দিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে। পেছনে বোমা হামলার পর কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলি।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের ভয়াবহতা ফুটে উঠেছিল ওই ছবিতে। বিশ্বের শত শত প্রকাশনায় বহুবার প্রকাশিত হয়েছে এই ছবি। কিন্তু সম্প্রতি ফেসবুক একটি পোস্ট থেকে 'নগ্নতার' অভিযোগে এই ছবিটি সরিয়ে নিয়েছিল।
নরওয়ের সর্বাধিক প্রচারিত আফটেনপোস্টেন পত্রিকার সম্পাদক এসপেন এজিল হ্যানসেন অভিযোগ করেছেন, ফেসবুক এই ছবিসহ পুরো পোস্ট ডিলিট করে দিয়েছে। এমনকি যে রিপোর্টার এই ছবি পোস্ট করেছিলেন, তার অ্যাকাউন্ট পর্যন্ত সাসপেন্ড করে দেয়া হয়। মার্ক জাকারবার্গ আসলে তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।
ফেসবুক অবশ্য বলছে, সাংস্কৃতিক কারণে 'নগ্নতা' বলে বিবেচিত হতে পারে এমন বিষয় তাদের নিষিদ্ধ করতে হয়। তবে হ্যানসেন এই যুক্তি মানতে নারাজ। তিনি বলেন, নাপাম বোমা হামলার এই বিখ্যাত ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করার ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে সরিয়ে নেয়া হয়।
মার্ক জাকারবার্গের কাছে লেখা এক খোলা চিঠিতে এসপেন হ্যানসেন তার বিরুদ্ধে সেন্সরশিপের অভিযোগ তুলেছেন। এতে তিনি মার্ক জাকারবার্গকে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর সম্পাদক বলে বর্ণনা করেন। তিনি লিখেছেন, বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমে এখন স্বাধীনতা খর্ব করতে চাইছে এবং এটি অনেক সময় করা হচ্ছে স্বৈরাচারী কায়দায়।
এসপেন হ্যানসেন বলেন, যদি আপনি একটি যুদ্ধের প্রামাণ্য ছবির সঙ্গে শিশুদের নগ্ন ছবির পার্থক্য বুঝতে না পারেন, তাহলে তা কেবল নির্বুদ্ধিতারই প্রসার ঘটাবে।
বিখ্যাত ছবিটিতে যে মেয়েটিকে দৌড়ে পালাতে দেখা যাচ্ছে, তার নাম কিম ফুক। সায়গনের (এখন হো চি মিন সিটি নামে পরিচিত) উত্তরে ১৯৭২ সালে যখন নাপাম বোমা হামলা হয়, তখন তার বয়স নয়। কিম ফুকের সমস্ত শরীর দগ্ধ হয়। ছবিটি তুলেছিলেন ফটোগ্রাফার নিক উট। তিনি এবং ব্রিটিশ টেলিভিশন সাংবাদিক আইটিএন এর ক্রিস্টোফার ওয়েন তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান। কিম ফুক বাঁচবেন তেমন আশা ছিল না। তবে তিনি বেঁচে যান। ১৪ মাস চিকিৎসার পর তিনি বাড়ি ফিরেন।
ক্রিস্টোফার ওয়েন ২০১০ সালে এই ঘটনার স্মৃতিচারণ করে বলেন, বোমা হামলার পর প্রচণ্ড তাপে মনে হচ্ছিল কেউ যেন নরকের দরোজা খুলে দিয়েছে। আমরা তারপর দেখলাম কিম এবং অন্য শিশুরা দৌড়ে আসছে। তাদের কেউ কোনো শব্দ করছিল না। কিন্তু যেই মাত্র তারা বড়দের দেখলো, তারা চিৎকার করে কাঁদতে শুরু করলো।
কিম ফুকের বয়স এখন ৫৩। তিনি থাকেন কানাডার টরোন্টোতে। বোমা হামলার আঘাতের যন্ত্রণা তাকে এখনও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/ফারজানা