ইসলামী চিন্তাবিদ জাকির নায়েকের এনজিও ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন (আইআরএফ) রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশনকে ৫০ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছিল। ২০১১ সালে এই রুপি দেওয়া হয়েছিল। এরকমই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে চলে আসায় যথেষ্ট অস্বস্তিতে পড়ে গেল কংগ্রেস। যদিও কংগ্রেসের তরফে বলা হয়েছে রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশন (আরজিএফ) নয়, ওই রুপি এসেছে রাজীব গান্ধী চ্যারিটেবল ট্রাস্ট (আরজিসিটি)-এর কাছে। কয়েক মাস আগেই তারা সেই রুপি ফিরিয়ে দিয়েছিল।
ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের এক মুখপাত্র সংবাদ মাধ্যমে এর সত্যতা স্বীকার করে জানান, ২০১১ সালে রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশনকে ৫০ লাখ রুপি অনুদান দিয়েছিল আইআরএফ। নারী শিক্ষা, ওষুধ ও অস্ত্রোপচার সম্পর্কিত উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য ওই অনুদান দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেস ওই রুপি ফেরত দেওয়ার যে কথা বলছে তা ঠিক নয়। হতে পারে কংগ্রেস ওই রুপি ফেরত দেওয়ার কথা ভেবেছিল। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই রুপি আমরা ফেরত পাইনি।
প্রসঙ্গত, রাজীব গান্ধী চ্যারিটেবল ট্রাস্ট-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী, তার ছেলে দলের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী ও মেয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীও। অন্যদিকে গান্ধী পরিবারের এই তিন সদস্যসের পাশপাশি রাজীব গান্ধী ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হলেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং। স্বাভাবিকভাবেই চাপ বাড়ছে কংগ্রেসেরও ওপরে। ইতোমধ্যেই এনিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিজেপি’র নেতারা।
জঙ্গিদের উদ্বুদ্ধ করা কিংবা মুসলিম ধর্মান্তকরণের পিছনে যখন জাকির নায়েকের নাম উঠে এসেছে এবং সেই প্রেক্ষিতে জাকিরের বিরুদ্ধে ভারত সরকার তদন্ত শুরু করেছে ঠিক সেসময় এই চাঞ্চল্যকর তথ্য সামনে এল।
কংগ্রেসের নেতা অভিষেক মনু সিংভি জানান, ‘আর্থিক অনুদান নেওযা হয়েছিল অনেক আগে। তখন তাঁর এনজিও নজরদারিতে ছিল না। কিন্তু এখন এই বিষয়টি এমন একটা সময় সামনে এল যখন জাকিরের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। ...তাছাড়া কয়েক মাস আগেই ওই রুপি ফেরত পাঠানো হয়েছে।’
কংগ্রেসকে তোপ দেগে বিজেপি নেতা আর পি সিং ট্যুইট করে জানান, ‘রুপি ফেরত দেওয়ার কথা বলে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। জাকিরের বিরুদ্ধে এখন পুরো দমে তদন্ত চলছে, তাই কংগ্রেস ভেবেছে এই মুহুর্তে রুপি ফেরত দেওয়াটা নিরাপদ। একটা সময় কংগ্রেসেরই নেতা দিগ্বিজয় সিং জাকিরকে ‘শান্তির বার্তা’ বলেছিলেন এখন আমরা বুঝতে পারছি কেন তাকে এটা বলা হয়েছিল’।
গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পরই জাকির নায়েকের নাম উঠে আসে। জানা যায়, হামলায় যুক্ত দুই জঙ্গি জাকিরের ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল। বিষয়টি সামনে আসার পরই জাকিরের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেয় বাংলাদেশ সরকার। সেদেশে জাকিরের পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দেওয়া হয়। জাকিরের বিরুদ্ধে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকারও আলাদা করে তদন্ত শুরু করে। তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পারে জাকিরের ইসলামিক ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে সন্ত্রাসের পাঠ দেওয়া হত এমনকি কমপক্ষে ৫০ জন মানুষ জঙ্গি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল বলেও জানতে পারে গোয়েন্দারা।
সন্ত্রাসীমূলক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ভারত সরকার জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে জঙ্গি দমন ধারায় অভিযোগ আনতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় তাঁর ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন (আইআরএফ)-কেও বে-আইনি বলে ঘোষণা করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে খবর।
বিডি-প্রতিদিন/ ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬/ আফরোজ