ভারতের বুলধানা জেলার হিভারখেড়ার একটি আবাসিক স্কুলে শিক্ষকদের বিকৃত যৌন লালসার শিকার হয়েছে ১২ জন আদিবাসী স্কুলছাত্রী। এদের মধ্যে তিন কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। ওই আবাসিক স্কুলের ১০ জন শিক্ষক ওই ছাত্রীদের নিয়মিত ধর্ষণ করত বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে প্রধান শিক্ষকসহ ৭ জনকে আটক করা হয়েছে।
এছাড়া আরও তিন শিক্ষকের সন্ধানে নেমেছে পুলিশ। এদিকে শিক্ষকদের এমন বীভৎস আচরণের কথা শুনে শিউরে উঠছেন সকলে। সমাজের চোখে শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা কী করে এমন বিকারগ্রস্ত মানসিকতার পরিচয় দিতে পারেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। অভিভাবকরাও রয়েছেন আতঙ্কে।
অন্যদিকে অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ ৭ শিক্ষককে হেফাজতে নিয়েছে। অভিযুক্তরা হলেন, প্রধান শিক্ষক দিগম্বর খারাট, সহ-শিক্ষক ললিত ভাজিরে, মান্থা কোকরে, সেবন্ত রাওয়াত, স্কুল পরিচালন কমিটির সভাপতি গজানন কোকরে, ট্রাস্ট বোর্ডের সদস্য সঞ্জয় ও পুরুষোত্তম কোকরে, ঝাড়ুদার ইতুসিং পওয়ার, সুপারিনটেন্ডেন্ট নারায়ণ আম্ভোরে, পরিচারক স্বপ্নিল, রাঁধুনি দীপক কোকরে।
ভুক্তভোগী ওই ১২ ছাত্রীকেই চিকিৎসার জন্য আকোলা জেলার একটি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। এছাড়া তাদের সাথে কাউন্সেলিংও করা হবে। ধর্ষিতা ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানিয়েছে, নিগৃহীত ছাত্রীদের বয়স ১২ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। স্কুলের প্রধান শিক্ষক-সহ বাকি শিক্ষক, পিয়ন ও অন্য কর্মীরা প্রায়ই তাদের ধর্ষণ করত। কাউকে কিছু বলে দিলে হত্যার হুমকি দিত।
গত সপ্তাহে দীপাবলির ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিল ওই বেসরকারি আবাসিক স্কুলের ছাত্রীরা। এদের অনেকেই জলগাঁও জেলার মুক্তাইনগরের হালখেড়া গ্রামের বাসিন্দা। ঘটনার কথা মনে করতে গিয়ে শিউরে ওঠেন গ্রামের ডেপুটি সরপঞ্চ বুলেসতেরনি সতী ভোঁসলে। তিনি বলেন, 'দীপাবলির সময় গ্রামের সব মেয়েরা ছুটোছুটি করে খেলা করছিল। কিন্তু তিন জন চুপ করে এক কোণে বসে ছিল। আমরা ওদের জিজ্ঞাসা করি, কেন খেলছে না? তখন ওরা জানায়, ওদের পেটে খুব ব্যথা হচ্ছে। তলপেটে ভারী কিছু রয়েছে। আমরা ওদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাই। ডাক্তার পরীক্ষা করে জানান, তিনটি মেয়েই অন্তঃসত্ত্বা। এরপর ওই বাচ্চা মেয়েগুলোকে জিজ্ঞাসা করে শিক্ষকদের এই অত্যাচারের কথা জানতে পারি।'
ভোঁসলের দাবি, 'আমরা অভিযুক্ত সব শিক্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। সরকার যেন কাউকে ছেড়ে না দেয়।' বুলধানার এসপি এস ডি বাভিস্কার জানিয়েছেন, 'মুম্বাই থেকে ৪৫০ কিলোমিটার দূরে ওই স্কুলের হোস্টেলে বেশিরভাগই আদিবাসী ছাত্রী থাকে। আমরা নিগৃহীতা ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলার জন্য মহিলা পুলিশকে পাঠাই। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হোস্টেলের ভিতরে ছাত্রীদের প্রায়ই ধর্ষণ করত শিক্ষকরা। ধর্ষিত ছাত্রীদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। অনেকেই হয়তো লজ্জা, ভয়ে মুখ খুলছে না।' এদিকে ধর্ষিত ছাত্রীদের অভিভাবকরা অভিযুক্ত শিক্ষকদের কড়া শাস্তির দাবি তুলে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
বিডি প্রতিদিন/৪ নভেম্বর ২০১৬/হিমেল-০৫