ভারতে বাতিল হওয়া পুরনো রুপিকে বদলে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কাছে সাহায্য চাইলেন এক বাংলাদেশি নারী দেহ ব্যবসায়ী। ১০ হাজার পুরনো ভারতীয় রুপিকে নতুন নোটে পরিবর্তন করার জন্য সামাজিক মাধ্যমে ট্যুইটারে মোদি ও সুষমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন ২১ বছর বয়স্ক ওই বাংলাদেশি নারী।
কয়েকদিন আগেই পুনের বুধওয়ারপেট এলাকার একটি যৌনপল্লী থেকে উদ্ধার করা হয় ওই নারীকে। কাস্টমারের কাছ থেকে টিপস বাবদ তার কাছে সঞ্চিত ছিল প্রায় ১০ হাজার রুপির পুরনো নোট। গত বছরের ৮ নভেম্বর মধ্য রাত থেকে পুরনো ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট বাতিল বলে ঘোষণা করে মোদির কেন্দ্রীয় সরকার। এরপর থেকে দুইমাস পর্যন্ত সেই রুপি বদলে নতুন নোট পরিবর্তনের সুযোগ থাকলেও সেসময় সেই রুপি বদলে নেওয়ার কোন সুযোগ না পাওয়ায় এবার সেই নোট বদলের জন্য হাতে লেখা একটি চিঠি ট্যুইট করে মোদিকে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। চিঠিটি ফেসবুকেও পোস্ট করেন ওই নারী। কিভাবে কাস্টমারের কাছ থেকে টিপস বাবদ রুপি পেয়ে ১০ হাজার রুপি সঞ্চয় করেছেন তাও বিস্তারিত আকারে মোদি ও সুষমাকে লেখা চিঠিতে জানিয়েছেন ওই বাংলাদেশি নারী।
তাঁর দাবি, নিজের দেশে স্বামীর সঙ্গে তিন বছর সংসার করার পর বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর বাংলাদেশেই একটি পোশাক কারখনায় কাজ নেন। মাসিক ৯ হাজার টাকায় বেশ কিছুদিন কাজও করেন তিনি। কিন্তু ভারতে আসলে মাসিক ১৫ হাজার রুপি উপার্জন করা যাবে বলে তাঁকে লোভ দেখায় ওই পোশাক কারখানারই এক সহকর্মী। আর সেই ফাঁদে পা দেন ওই নারী।
ট্যুইট করে মোদিকে লেখা চিঠিতে ওই নারী জানায়, ‘আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল না থাকায় আমি ওই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাই। এরপর আমাকে ভাসিতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে এক নেপালি নারীর কাছে ৫০ হাজার রুপিতে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এরপর আমায় বেঙ্গালুরুতে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে অন্য এক নারীর কাছে আমাকে হস্তান্তর করা হয়। পরে ওই নারীই জোর করে আমাকে দেহ ব্যবসায় নামায়। পরবর্তী সময়ে আমাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়ার নাম করে পুনের একটি যৌনপল্লীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়’।
পুনেতে প্রায় দেড় বছর ধরে তার ওপর অত্যাচারের পর ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে পুনের বুধওয়ারপেটের একটি যৌনপল্লী থেকে রেসকিউ ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ওই নারীকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারের পরই তাঁকে নিয়ে আসা হয় একটি নারী হোমে। যদিও তার কাছে থাকা রুপি বা অন্যান্য জিনিস যৌনপল্লীতেই রেখে আসতে বাধ্য হন ওই নারী। এরপর হোমে থাকাকালীন সময়েই স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় তাঁকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। অবশেষে গত এপ্রিল মাসের শুরুর দিকেই বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে তাকে ফিরিয়ে নেওয়ার সম্মতিপত্র এসে পৌঁছয়। এরই মধ্যে পুলিশের সাহায্য নিয়ে পুনের ওই যৌনপল্লীতে রেখে আসা অর্থসহ অন্যান্য জিনিসগুলিও ফিরে পান তিনি। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হল সঞ্চিত অর্থের সবটাই পুরোনো ৫০০ ও ১০০০ রুপির নোট। এরপরই সেই পুরোনো নোট পরিবর্তনের জন্য ওই নারীর হয়ে মোদি-সুষমার কাছে ট্যুইট করে চিঠি দিয়েছে রেসকিউ ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ। ওই বাংলাদেশি নারীর হয়ে মোদি ও সুষমাকে উদ্যেশ্য করে ওই সংস্থাই হিন্দিতে একটি চিঠি লিখে দেয়। এরপর তা সংস্থার পক্ষ থেকে ট্যুইট ও ফেসবুকে পোস্ট করা হয়।
রেসকিউ ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট ডিরেক্টর দীপেশ পাঠক জানান, ‘আমরা সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছি, তারা যেন এই বিষয়টিকে বিশেষভাবে বিবেচনা করে দেখে। পাচার হয়ে যাওয়া নারীদের অধিকাংশই শিক্ষিত নয়, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সম্পর্কেও তারা অবগত নয়। এর আগেও আমরা শতাধিক নারীদের প্রায় ৬ লাখ রুপির মতো পুরোনো নোট বদলে দিয়েছি, তাই আমরা এবারও আশাবাদী’।
বিডি-প্রতিদিন/০৩ মে, ২০১৭/মাহবুব