'মানুষ'-এর মতো বিয়ে করতে চেয়েছিলেন ওরা। কোনও অতিমানবিক আয়োজন বা উপহার, উপঢৌকনে ঢাকা পড়ার ইচ্ছা ছিল না। ইচ্ছে ছিল মানুষ হয়েও যারা মানবিক অধিকার থেকে বঞ্চিত, তাদের সঙ্গেই জীবনের বিশেষ মুহূর্তটা কাটানোর। চেয়েছিলেন অহেতুক সবার পেট পুঁজা না করিয়ে গরীবদের পেটের জ্বালা জুড়োতে। আর সেটাই হবে প্রকৃত 'মানুষ'-এর মতো কাজ। অধ্যাপক দম্পতি করে দেখিয়েছেন সেটাই।
বিয়ের অনুষ্ঠানে লোকজন ডেকে না খাইয়ে ৩০০ জন গরীব মানুষের পেটের জ্বালা মিটালেন নব দম্পতি। এমন বিয়ে বেনজির না হলেও অভিনব বলাই যায়। বাঙালির বিয়ে মানে তিন দিনের বিশাল অনুষ্ঠান, জাঁকজমক। আর সেখানে খাদ্যরসিক বাঙালির জন্য পেট পুজোর আয়োজন থাকবে না? তা হয় না।
নিজেদের এমন অতিমানবিক ভাবে লোকদেখানি করে তোলার ইচ্ছাটাই ছিল না দেবীপ্রসাদ ও তিথি'র। চেয়েছিলেন মান-হুঁশ রেখে বিয়েটা স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলতে। সেটাই কাজে করে দেখিয়েছেন প্রফেসর দম্পতি দেবীপ্রসাদ ভট্টাচার্য ও তিথি দে। 'অতিসাধারণ' বিয়েতেতাঁরা খাওয়ালেন শুধুই গরীব দুঃখীদের।
এই দম্পতি দক্ষিণ ২৪ পরগণার নামখানার বাসিন্দা। পেশায় দুজনেই কম্পিউটার সায়েন্সের অধ্যাপক। দেবীপ্রসাদের কর্মস্থল ব্যরাকপুরের রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজ। তিথি নেতাজী নগর কলেজের দিবাবিভাগের অধ্যাপিকা। বছর পাঁচেক আগেই শুরু হয়েছিল প্রেম। তারপরই ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়েছে সম্পর্ক। বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চলতি বছরেই।
এভাবে বিয়ের সিদ্ধান্ত কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে দেবীপ্রসাদ বলেন, এমন অনেক মানুষ আছেন যারা দিনের পর দিন খেতে পায় না। আর একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে খাবার খেয়ে লোকে শেষ করতে পারে না। বেঁচে যাওয়া খাবার নষ্টও কম হয় না। এসব বাড়াবাড়ি ছাড়া কিছু নয়। এই আয়োজন করতে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয় তা দিয়ে যদি না খেতে পাওয়া মানুষের পেট ভরে তবে সেটাই আসল সার্থকতা। সেটাই।
এই দম্পতির বিয়ের ছবি ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। অনেকেই প্রশংসা করছেন তাদের এমন ব্যতিক্রম সিদ্ধান্তের। কিন্তু কতজন তাদের মতো সাহসী হয়ে উঠতে পারবেন তা বলা মুশকিল। কিন্তু তবু কিছু দৃষ্টান্ত থাকে যা ভাবতে শেখায়। তেমনই দৃষ্টান্ত নবদম্পতি দেবীপ্রসাদ-তিথি
বিডি প্রতিদিন/২৯ অক্টোবর ২০১৭/আরাফাত