ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’এর সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন দলের সহ সভাপতি রাহুল গান্ধী (৪৭)। সোমবার সকালে দিল্লিতে ২৪, আকবর রোডে অবস্থিত কংগ্রেসের সদর দফতরে রাহুল তাঁর মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং, কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ, কুমারী শৈলজা, সিপি যোশী, অম্বিকা সোনি, আনন্দ শর্মা প্রমুখ। রাহুলের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দলের সদর দফতরের বাইরে ভিড় জমান দলের কয়েক হাজার কর্মী ও সমর্থকরা। তারা রাহুলের সমর্থনে স্লোগানও দিতে থাকেন।
এদিন মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে ঠাকুরমা (দাদি) ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন দুই কংগ্রেস নেতার সঙ্গে বৈঠক করেন রাহুল গান্ধী। এদের একজন হলেন দেশটির সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি, অন্যজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। পাশাপাশি দুইজনের কাছ থেকেই তাদের আশীর্বাদ চেয়ে নেন রাহুল।
গত মাসেই দিল্লিতে দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে দলের পরবর্তী সভাপতি হিসাবে রাহুলের নাম প্রস্তাব করা হয়। সেক্ষেত্রে মা সোনিয়ার স্থলাভিষিক্ত হবেন রাহুল। ১৯৯৮ সালে দলের সভানেত্রী পদে বসেন সোনিয়া। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সময় (১৯ বছর) ধরে দলের সভানেত্রীর পদ অলঙ্কৃত করেছেন তিনি। অন্যদিকে ২০১৩ সাল থেকে বর্তমানে দলের সহ-সভাপতির পদে রয়েছেন রাহুল।
সোমবার বিকেল তিনটায় মনোনয়নপত্র পেশ করার শেষ দিন। এই সময়ের মধ্যে আর কেউ এই পদে মনোনয়পত্র জমা না দিলে আজ বিকালেই ঘোষণা হয়ে যেতে পারে যে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি হয়েছেন রাহুল গান্ধী। তবে একটির বেশি মনোনয়নপত্র জমা পড়লেই সভাপতি পদে নির্বাচনের দিন ঘোষণা দেবে দলের নির্বাচন কমিশনার মুলাপল্লি রামচন্দ্রন।
এদিকে সভাপতি পদে রাহুলের মনোনয়নপত্র পেশের পর তাঁকে আগাম শুভেচ্ছা জানিয়েছেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধারামাইয়া, দেশটির সাবেক অর্থমন্ত্রী পি. চিদাম্বরম, জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা রাজ বব্বর, কংগ্রেস সাংসদ জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়াসহ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্ব।
কংগ্রেস সভাপতির পদে রাহুলের বসার সিদ্ধান্ত এক প্রকার পাকা হয়েই ছিল। তবু নানা কারণে বারবার তা পিছিয়ে যাচ্ছিল। এখন সেটা কেবল কয়েক ঘণ্টার সময়ের অপেক্ষা বলে মনে করা হচ্ছে। রাহুলের আগমনকে কেন্দ্র করে তরুণ নেতাদের মধ্যে উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। আগামী ৯ ডিসেম্বর মোদির রাজ্য গুজরাটে প্রথম দফার বিধানসভার নির্বাচন। তার আগে রাহুলের এই পদোন্নতি দলকে আরও চাঙ্গা করবে বলেই ধারণা রাজনৈতিক মহলের। সেক্ষেত্রে রাহুলকে কাছে পেয়ে নতুন উদ্দমে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করতে পারবে কংগ্রেস। নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যেই কার্যত গোটা গুজরাটেই চষে বেড়াচ্ছেন রাহুল, মিটিং-মিছিল, সভা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষদের সঙ্গে কথা বলা, তাদের সঙ্গে মিশে যাওয়া কোন কিছুই বাদ রাখছেন না তিনি। স্বভাবতই বেশ কিছুটা চাপে রাজ্যটির শাসক দল বিজেপি। তবে এত কিছুর পরেও গুজরাচ ভোটে কংগ্রেসের পক্ষে ইতিবাচক প্রতিফলন পড়ে কিনা সেটাই এখন দেখার। আর যদি ফল খারাপ হয়, তাহলে ফের রাহুলকে নিয়ে বিতর্ক যে শুরু হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিডি-প্রতিদিন/০৪ নভেম্বর, ২০১৭/মাহবুব