ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’এর সভাপতি হিসাবে রাহুল গান্ধী (৪৭)-এর নাম ঘোষণা শুধু সময়ের অপেক্ষা। সোমবারই সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন রাহুল। এই পদে রাহুল ছাড়া আর কেউ মনোনয়ন জমা দেননি। সেক্ষেত্রে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তিনি সভাপতি হতে যাচ্ছেন। তবুও আগামী সোমবার মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেই আনুষ্ঠানিকভাবে সভাপতি হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানা গেছে।
বর্তমানে দলের সহ-সভাপতির পদে রয়েছেন রাহুল। ২০১৩ সাল থেকে এই পদে রয়েছেন তিনি। সেক্ষেত্রে মা সোনিয়া গান্ধীর ছেড়ে যাওয়া পদে বসবেন রাহুল। ১৯৯৮ সালে দলের সভানেত্রী পদে বসেন সোনিয়া। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সময় (১৯ বছর) ধরে দলের সভানেত্রীর পদ অলঙ্কৃত করেছেন তিনি। তবে সভাপতির পদ থেকে অবসর নিলেও রাজনীতি থেকে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছেন না সোনিয়া গান্ধী। ছেলে রাহুল কংগ্রেসের সভাপতি হলে তাঁর উপদেষ্টা হিসাবে দেখা যেতে পারে মা সোনিয়াকে। কংগ্রেস সূত্রে অন্তত এমনটাই খবর। কারণ সোনিয়া কেবলমাত্র দলের নেতাকর্মীদের সাথেই যোগসূত্র তৈরি করাটাই নয়-ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি)’র নেতা শারদ পাওয়ার, তৃণমূল কংগ্রেস (টিএমসে) প্রধান মমতা ব্যানার্জি কিংবা রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) প্রধান লালু প্রসাদ যাদবের মতো দিল্লির শাসক বিরোধী শীর্ষ দলগুলির নেতাদের সঙ্গেও এক অনন্য বন্ধন রচনা করে চলেছেন।
কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা গুরুদাস কামাত জানান, ‘আমরা সকলেই রাহুলজি’কে স্বাগত জানাই, পাশাপাশি গত প্রায় দুই দশক ধরে আমাদের সঙ্গে থাকায় সোনিয়াজি’কেও আমরা ধন্যবাদ জানাই। তিনি যেভাবে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন আমরা তাঁর জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই’।
কংগ্রেসের মুখপাত্র রনদীপ সুরজেওয়ালা জানান, ‘আমরা আশাবাদী যে দল এবার থেকে রাহুলজি ও সোনিয়াজি-উভয়ের নেতৃত্বের সুবিধা ভোগ করবে’। সোনিয়ার প্রসঙ্গ তুলে তিনি জানান, ‘শুরুতে রাজনীতিতে অনিচ্ছুক এক নারী খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ঘরোয়া রাজনীতির নিয়মকানুন শিখেছেন, হিন্দি ভাষাকেও তিনি নিজের আয়ত্তে এনে ফেলেছেন এবং আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ে ২০০৪ সালে কেন্দ্রে তৎকালীন ক্ষমতাসীন জোট জাতীয় গণতান্ত্রিক মোচা (এনডিএ) কে উৎখাত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিলেন’।
অন্যদিকে, মা সোনিয়ার মতো মেয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে দেখা যেতে পারে ভাই রাহুলের উপদেষ্টা ও তাঁর কৌশলবিদ হিসাবে বা রণনীতি ঠিক করার কাজে। একইসঙ্গে গান্ধী পরিবারের নিজের এলাকা বলে পরিচিত উত্তরপ্রদেশের দুই কেন্দ্র আমেথি (রাহুলের লোকসভা কেন্দ্র) ও রায় বেরিলি (সোনিয়ার লোকসভা কেন্দ্র)-তে প্রচারণায় সীমাবদ্ধ থাকতে দেখা যেতে পারে প্রিয়াঙ্কাকে।
সূত্রে খবর, ছেলে রাহুলকে যখন সহ-সভাপতি থেকে দলের সভাপতির পদে উন্নীত করার ব্যাপারে মনস্থির করেছিলেন সেসময়ই উত্তরাধিকার সূত্রে সোনিয়া একটি স্পষ্ট স্বাতন্ত্র্য গড়ে তুলেছেন। যেখানে মেয়ে প্রিয়াঙ্কাকে পরামর্শ দিয়েছেন তাঁর নিজের পরিবারের দিকে খেয়াল রাখতে পাশাপাশি ভাই রাহুলকে সমর্থন করতে। সেক্ষেত্রে মনে করা হচ্ছে রাহুলের উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব নিয়ে দলের সাংগঠনিক দুর্বলতা ও ফাঁক ফোঁকরগুলিকে চিহ্নিত করে তা মেরামত করতে বিশেষ ভূমিকায় দেখা যেতে পারে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে।
বিডি-প্রতিদিন/০৫ ডিসেম্বর, ২০১৭/মাহবুব