ভারত মহাসাগরে ২৬ টি রিং আকৃতির প্রবাল প্রাচীরের মতো দ্বীপের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি দ্বীপরাষ্ট্র মালদ্বীপ। ছোট বড় প্রায় ১১৯২ টি দ্বীপ আছে দেশটির। কিন্তু পর্যটন সমৃদ্ধ দেশটিতে হঠাৎ করেই শুরু হয়েছে অস্থিতিশীলতা। গত রাতে জরুরি অবস্থা জারি করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন। গ্রেফতার করা হয়েছে দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুম, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি আবদুল্লাহ সাঈদ ও বিচারক আলী হামিদকে। এছাড়া নিরাপত্তা রক্ষাকারীদেরকে গ্রেপ্তারের বিশেষ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে জন সমাবেশ।এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে 'ভারত ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের' সাহায্যও চেয়েছে মালদ্বীপ সুপ্রিম কোর্ট।
এদিকে রাজনৈতিক উত্তেজনায় টালমাটাল মালদ্বীপের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে হতাশা, উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র ব্রিটেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ পরিস্থিতিতে হতাশা ও অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছে, মালদ্বীপের জনগণের পাশে আছে যুক্তরাষ্ট্র। মালদ্বীপ সরকার ও দেশটির সেনাবাহিনীকে অবশ্যই আইনের শাসন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। পরিস্থিতির দিকে বিশ্ববাসী নজর রাখছে।
বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনকে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার করে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এছাড়া বৃটেনে আশ্রয় নেয়া মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহামেদ নাশিদ তার দেশের সরকারের এ কাজকে সম্পূর্ণ অবৈধ বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, এ ঘটনা অভ্যুত্থানের পর্যায়ে পড়ে। অবিলম্বে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনের পদত্যাগ করা উচিত।
যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত:
গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট মালদ্বীপে প্রথমবার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহামেদ নাশিদ ও বিরোধী দলীয় শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা কর্মীকে মুক্তি দেয়ার আদেশ দেয় ।কিন্তু সেই আদেশ মানতে অস্বীকৃতি জানান প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন।
ওই রায়ে বলা হয়, ২০১৫ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহামেদ নাশিদের বিরুদ্ধে যে বিচার করা হয়েছিল তা ছিল অসাংবিধানিক। এছাড়া রায় হওয়ার আগেই দেশটির পুলিশ কমিশনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এ মামলা নিয়ে বর্তমান সুপ্রিম কোর্ট যে রায়ই দেবে তা তারা বাস্তবায়ন করবেন। এমন বক্তব্য দেয়ার কারণে তাকেও বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন। এখন প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনকে অভিশংসন বা তাকে উৎখাতের যেকোনো রকম চেষ্টার বিরুদ্ধে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে সেনাবাহিনীকে।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট যে রায় দিয়েছে তাতে সরকার অনেকটা বিপদে পড়ে যায়। যদি ওই রায়কে বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে রাজনৈতিক ফাঁদে পা রাখবেন প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন। কারণ, এ বছরেই সেখানে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। যদি তিনি বরখাস্ত করা ১৫ জন এমপিকে পুনর্বহাল করেন তাহলে পার্লামেন্টে বিরোধীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে পড়বে এবং তারা স্পিকারকে অভিশংসিত করবে। পক্ষান্তরে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনকেও উৎখাত করার ক্ষমতা রাখবে। এরপর যদি সাবেক প্রেসিডেন্ট নাশিদ বৃটেন থেকে দেশে ফিরে যান এবং নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তাহলে ক্ষমতার মসনদ হারানোর সমূহ আশঙ্কা গ্রাস করেছে প্রেসিডেন্ট ইয়ামিনকে। তাই তিনি জরুরি অবস্থাকেই বেছে নিয়েছেন। এর ফলে মালদ্বীপে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। রাতভর ধরপাকড় করা হয়। পাশাপাশি চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ল মালদ্বীপের রাজনৈতিক ভবিষ্যত।
বিডিপ্রতিদিন/ ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮/ ই জাহান