বেশ ভালই চলছিল ভারতের কেরালার একটি বেসরকারি কলেজের বিএসসি তৃতীয় বর্ষের নারী শিক্ষার্থী হানান হামিদের। কোচির মাধবনা এলাকার বাসিন্দা হানানের তালাকপ্রাপ্ত মা জাইরাবির চিকিৎসা, ভাইয়ের স্কুলের খরচ, নিজের কলেজে পড়ার খরচ চালানো-সবমিলিয়ে সংসারের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার জন্য নিজের মতো লড়াই করছিলেন হানান।
প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠেই ওঠেই পাশের বাজারে গিয়ে মাছ কিনে এনে পাশের এক বন্ধুর বাসায় ফ্রিজে রেখে আসতো হানান। এরপর বাসায় এসে একটু পড়াশোনা করে সাড়ে ৭ টা নাগাদ বাস ধরে বাসা থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে কলেজে চলে যেতো সে। কলেজ শেষ করেই ওই মাছ নিয়ে এরনাকুলামের থাম্মানাম বাজারে বসে মাছ বিক্রি করতো হানান।
এরপর সেই রুপি দিয়েই চাল-ডাল-শব্জি কিনে বাড়ি ফিরতো সে। সংসার চালাতে হানানের এই হাড় ভাঙা পরিশ্রমের খবর গত বুধবার প্রকাশিত হয় মালয়ালাম পত্রিকা ‘দৈনিক মাতৃভূমি’তে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কার্যত বিখ্যাত হয়ে যায় হানান। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় তার গল্প।
সাধারণ মানুষ থেকে রাজনীতিবিদ, পরিচালক সকলের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। অসংখ্য শুভেচ্ছা আসতে থাকে। সেই সাথে আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতিও। এমনকি হানানের সিনেমায় অভিনয় করার স্বপ্নের কথা জেনে চিত্র পরিচালক অরুণ গোপী তার পরের ছবিতে হানানকে জুনিয়র আর্টিস্ট নেওয়ার কথা ঘোষনা করেন। যেই ছবিতে অভিনয় করছেন মালায়লম সুপারস্টার মোহনলালের পুত্র প্রণব মোহনলাল।
আর এরপরই ঘটনা অন্য মোড় নেয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় হয়ে ওঠে বিরোধিতা, সমালোচনা আর কুৎসা। কেউ কেউ বলতে থাকে হানানের মাছ-বিক্রি করে সংসার চালানোর ঘটনাটি পুরোটাই বানানো, সেটি নাকি ছবির প্রচার কৌশল। কেউ কেউ আবার এও প্রশ্ন তুলেছে যে এক মুসলিম নারী হয়ে মাথায় হিজাব না পড়ে কিভাবে বাজারে মাছ বিক্রি করতে পারে।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় কান্নায় ভেঙে পড়েছে হানান। তিনি বলেন, ‘আমি কোন সহায়তা চাই না। দয়াকরে আমায় একটু একা থাকতে দিন এবং বেঁচে থাকার জন্য যে কোন কাজ করার অনুমতি দিন’।
যদিও সমালোচকদের একহাত নিয়ে হানানের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। তিনি জানান, ‘যে পরিস্থিতিতে হানান লড়াই চালাচ্ছে তাতে আমি গর্বিত। অন্য নারীদেরও বলবো সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারণার বিরুদ্ধে তারা যেন মনোবল না হারায়। তার অভিযোগ সোশ্যাল মিডিয়া হল দুই দিকে ধারওয়ালা তরবারী, এটি ব্যবহারে সকলের সতর্ক থাকা উচিত।
ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কে.জে.আলফোনসও হানানের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। হানানের প্রতিবেশিরা ও তার কলেজের অধ্যক্ষরা জানিয়েছেন, পত্রিকায় হানানকে নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে তা মিথ্যা বা বানানো নয়।
হানানের সাথে দেখা করতে কোচিতে যাচ্ছেন কেরলের নারী কমিশনের চেয়ারপার্সন এম.সি.জোশেফাইন। তার অভিমত এরকম একজন কঠোর পরশ্রমী তরুণীর প্রচেষ্টাকে ছোট করাটা সত্যিই নিন্দনীয়।
এদিকে সোশ্যাল সাইটে হানান সম্পর্কে কটুক্তি করায় শুক্রবারই নাসিরুদ্দিন শেখ নামে ২১ বছর বয়সী এক যুবককে তথ্য প্রযুক্তি আইনে আটক করেছে কেরলের পুলিশ।
বিডি প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ সিফাত তাফসীর