ভারতের জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাংসদ দলের প্রতিনিধিরা। তাদের অভিমত উপত্যকার মানুষ মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত। মঙ্গলবার কাশ্মীরের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই আবেদন জানিয়েছেন ইইউ এমপিদের দল।
গত ৫ আগষ্ট জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করা এবং রাজ্যটিকে বিভক্ত করে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ-এই দুইটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত সরকার। অশান্তির আশঙ্কায় একদিকে যেমন পর্যটক, তীর্থযাত্রী, শ্রমিক, শিক্ষার্থীদের জম্মু-কাশ্মীর ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়, তেমনি বন্ধ করে দেওয়া হয় টেলিফোন, ইন্টারনেট ও কেবল টেলিভিশন পরিষেবা। একাধিক জায়গায় জারি করা হয় কার্ফু।
কয়েকজন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দদেরও গৃহবন্দী করা হয়। সব মিলিয়ে গত ৮৬ দিন ধরে কার্যস্ত স্তব্ধ কাশ্মীরের জনজীবন। এনিয়ে বিরোধী দলগুলি সরব হয়। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয় সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক।
উপত্যকার বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতেই মঙ্গলবার সেখানে যায় ২৩ জন ইইউ সাংসদদের এক প্রতিনিধি দল। দলের সদস্য তথা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার সম্পর্কিত হাই কমিশনার ও মুখপাত্র রুপের্ট কোলভিলে বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন যে, কাশ্মীরে জনগণ দীর্ঘদিন ধরেই মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত রয়েছে। আমরা ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে আবেদন জানাচ্ছি তারা যেন সেখানকার অবরুদ্ধ পরিস্থিতি তুলে ফেলে মানবাধিকার পুনপ্রতিষ্ঠা করেন।’
এক প্রেস বিবৃতিতে কোলভিলে জানান, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের একাধিক জায়গা থেকে কয়েকদিন হল কার্ফু শিথিল করা হয়েছে, কিন্তু এখনও অধিকাংশ জায়গায় তা জারি রয়েছে। মানুষের অবাধ যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তাদের শান্তিপূর্ণ কর্মকান্ডের অধিকারে বাধা দেওয়া হচ্ছে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ধর্মের স্বাধীনতার ওপরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে এই রিপোর্টও এসেছে যে অস্ত্রধারী জঙ্গি গোষ্ঠী সেখানকার স্থানীয় মানুষদের ব্যবসা-বাণিজ্য করতে বা স্কুলে যেতে হুমকি দিচ্ছে। জঙ্গিদের দাবি না মানায় স্থানীয়দের ওপর একাধিক সহিংসতা সংগঠিত করা হচ্ছে বলেও আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে।’
ইইউ সাংসদের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলার পাশাপাশি বিখ্যাত ডাল লেকে ভ্রমণ করেন। প্রতিনিধি দলের সফর উপলক্ষে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা মোতায়েন ছিল।
যদিও দিল্লিতে অবস্থিত ইইউ অ্যামবাসি থেকে জানানো হয়েছে, এটি সরকারি সফর নয়। এমপিরা প্রত্যেকেই বেসরকারি ভাবে কাশ্মীর সফরে গেছেন।
যদিও ইইউ এমপি দলের এই কাশ্মীর সফর নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী, কংগ্রেস সাংসদ অধীর রঞ্জন চৌধুরী, বিএসপি নেত্রী মায়াবতীসহ বিরোধী দলের নেতারা।
মঙ্গলবার ট্যুইট করে প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘ইইউ সংসদীয় প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হল, অথচ ভারতীয় সংসদ সদস্যদের শ্রীনগর বিমানবন্দরে আটকে রেখে দেওয়া হয়। এটা সত্যিই অদ্ভুত জাতীয়তাবাদ।’
সোমবারই ২৭ জন সাংসদের একটি প্রতিনিধি দল দিল্লিতে পৌঁছায়। যদিও এর মধ্যে ২৩ জন সাংসদই কাশ্মীর সফরে যান। বাকী চার সাংসদ এদিন সকালেই তাদের নিজেদের দেশে ফিরে যান।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল