একি চাপ না সমঝোতা? আসলে এ ক্ষেত্রে কোনটা মানায়। কোচ পিটার বাটলারের বিপক্ষে নানা অভিযোগ তুলে জাতীয় নারী দলের ১৮ ফুটবলার ক্যাম্প বর্জন করেছিলেন। আরব আমিরাতের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে অংশ নেননি তারা। তাদের ক্ষোভ দেখে মনে হচ্ছিল স্বেচ্ছায় ফুটবল থেকে অবসর নিতে পারেন। এ নিয়ে ক্রীড়ামোদীরাও আতঙ্কিত ছিলেন। কেননা একসঙ্গে এতজন গণ অবসরে গেলে তাহলে নারী ফুটবলে অবস্থা দাঁড়াবে কী? পুরুষ ফুটবলাররা যেখানে ব্যর্থ সেখানে মেয়েরাই তো একের পর এক সাফল্য এনে দিচ্ছেন। সিনিয়রদের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে এরাই তো টানা দুবার শিরোপা জিতে দেশকে নিয়ে গেছেন অন্য উচ্চতায়। এরা না থাকলে তো নারী ফুটবলে ধস নেমে আসবে।
না, শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহের চূড়ান্ত অবসান ঘটেছে। কেউ ফুটবল ছাড়ছেন না। খেলবেন ঠিকই, ১৮ জন যখন বাটলারের অনুশীলনে যেতে অস্বীকৃতি জানান। তখন তাদের বাদ দিয়ে ৩৫ খেলোয়াড়ের সঙ্গে চুক্তি করে বাফুফে। এতে বিদ্রোহীদের আরও তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠার কথা। যাক সব তিক্ততা ভুলে চুক্তিতে এসেছে তারাও। এর ফলে চুক্তিবদ্ধ নারী ফুটবলারের সংখ্যা এখন দাঁড়াল ৫৩। ভুটানে যারা খেলতে গেছেন তারাও সেখানে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তির মেয়াদ স্বাক্ষরের তারিখ থেকেই কার্যকর হয়েছে।
সামনে নারী দলের ব্যস্ত সময়। দুটি প্রীতি ম্যাচ রয়েছে। একটি ৩০ মে জর্ডানের বিপক্ষে। আরেকটি ৩ জুন, যেখানে প্রতিপক্ষ ইন্দোনেশিয়া। এরপর আবার মিয়ানমারে এশিয়ান বাছাইপর্ব রয়েছে। শক্তিশালী টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ সবাইকে পাবে এটাই বড় সুসংবাদ। প্রীতি ম্যাচ খেলতে ভুটানে ১০ জনের মধ্যে পাঁচজনকে জাতীয় দলে ডেকেছেন হেড কোচ পিটার বাটলার। প্রকৃতপক্ষে বিদ্রোহীদের দলে ফেরাতে বাফুফেও চাপে ছিল। কেননা টানা দুবার সাফ জেতায় তাদের কদরই আলাদা। সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে নারী জাতীয় দলকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়েছে।
প্রশ্ন বিদ্রোহীরা কি কারোর অনুরোধ বা নির্দেশেই চুক্তিতে এসেছেন? রহস্যটা তো এখানেই। এজন্য নাকি তারা এক কৌশল বেছে নিয়েছেন। আর তা হলো বেতন বৃদ্ধি করা। এ নিয়ে নাকি বাফুফের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়। এখানে নাকি বড় ভূমিকা রাখেন ভুটানে খেলতে যাওয়া ফুটবলাররা। বেতন বৃদ্ধি নিশ্চিত হওয়ার পরই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী তিন ক্যাটাগরিতে বেতন পাবেন নারী ফুটবলাররা। সিনিয়ররা পাবেন সর্বোচ্চ ৫৫ হাজার করে। আর জুনিয়ররা পাবেন ২০ হাজার করে। এর মধ্যে জাতীয় দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন আগের চেয়ে বেতন বাড়িয়ে চুক্তির আওতায় এসেছেন।
বেতন বাড়ল চুক্তিও হলো। তাহলে তাহলে কি নারী ফুটবলে সব সমস্যার ইতি ঘটল? না, জট যখন পাকে তা কী সহজে কাটে? বেতন বাড়ানো নিয়েও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে কয়েকজন জুনিয়র খেলোয়াড় এ নিয়ে হতাশ। তাদের কথা, যারা শৃঙ্খলা ভাঙলেন, প্রয়োজনের সময় খেললেন না। কোচকে অপমান করলেন। তাদেরই কি না বেতন বাড়ানো হলো। তাহলে কি আমরাই আসামি? এর জবাব বাফুফে দিতে পারবে কি? কেননা এ সমঝোতা যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়নি। তা তো সবাই বোঝেন।