ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যদের কাশ্মীরে নিয়ে গিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বার্তা দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই ইউরোপের অন্যতম বড় স্বর সেই প্রয়াসে কিছুটা হলেও পানি ঢেলে দিল।
আজ শনিবার জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দীর্ঘ দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পরে এক বিশদ যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে দুই দেশ।
দুই রাষ্ট্রনেতা সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দেন, বাণিজ্যিক ও কৌশলগত, দু’টি ক্ষেত্রেই সমন্বয় গভীর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এমনকি পাকিস্তানের নাম না করে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসের নিন্দা করেছেন মোদি ও মেরকেল। কিন্তু কূটনৈতিক মৈত্রীর এই তুঙ্গ মুহূর্ত তৈরি হওয়ার পরেই এ দিন রাতে তার সঙ্গে আসা বিদেশি সাংবাদিকদের জার্মান চ্যান্সেলর বলেন, কাশ্মীরের পরিস্থিতি অত্যন্ত নড়বড়ে। সেখানকার উন্নতি প্রয়োজন।
'কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়’ তা স্বীকার করে নিয়ে জার্মান চ্যান্সেলরের মন্তব্য, আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে জিজ্ঞাসা করব, এলাকায় শান্তি ও স্থিতাবস্থা ফেরাতে তিনি কী পদক্ষেপ করছেন!
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এমন দিনে নয়াদিল্লিতে পা রাখলেন জার্মান চ্যান্সেলর, যখন রাজ্যের বিশেষ মর্যাদা খুইয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, অগস্টে মোদি সরকার কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পরই জার্মানির পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছিল, এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
বিষয়টি নিয়ে তৃতীয় পক্ষের মাথা গলানো উচিত নয়। কিন্তু এই বিবৃতিটি দেয়া হয়েছিল জার্মান ভাষায়। ফলে এই নিয়ে তখন বিশেষ প্রচার হয়নি। কিন্তু সম্প্রতি সে দেশের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলা হয়, কাশ্মীর থেকে অবিলম্বে সমস্ত বিধি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা উচিত। তার পরে তিন দিন আগে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের জার্মান প্রতিনিধি নিকোলাউস ফেস্ট-ও কাশ্মীর সফর করে বলেছিলেন, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। কিন্তু নিকোলাউস অতি দক্ষিণপন্থী, জার্মানির ঘরোয়া রাজনীতিতে জার্মান চ্যান্সেলরের দল থেকে তার দলের অবস্থান অনেকটাই আলাদা। তাই সাউথ ব্লক আশা করেছিল, জার্মান সদস্যের ওই মন্তব্য, কোনও ভাবেই চ্যান্সেলরের মন্তব্যে প্রভাব ফেলবে না।
আজ দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকেও মোদি মেরকেলকে জানান, কাশ্মীর পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের রয়েছে। ৩৭০ অনুচ্ছেদ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার কারণগুলোও তুলে ধরেন তিনি। কিন্তু তার পরেও দেখা গেল, ম্যার্কেলের মন্তব্যে নিকোলাউসের সেই মন্তব্যেরই অনুকরণ রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত