দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার যেসব দেশ সারাবিশ্বের বেশকিছু পণ্যের চাহিদা মেটায়, চলতি সময়ে এমন দেশগুলো বড় রকমের বিপর্যয়ের মুখোমুখি। এর ফলে এ অঞ্চলের উৎপাদন খাত দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলেও আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
গত কয়েক দশক ধরে সারাবিশ্বে কম্পিউটার, গাড়ি, ইলেকট্রনিক্স, পোশাকসহ বেশকিছু পণ্যের বড় একটা অংশ সরবরাহ করে আসছে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার মতো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশ।
কিন্তু করোনা মহামারি এসব দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। বিশেষ করে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকে অবস্থা ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে। বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক কারখানা।
সম্প্রতি এ অঞ্চলের ২ হাজার ১০০টি কারখানা নিয়ে চালানো এক সমীক্ষা থেকে বেরিয়ে এসেছে বেশ বড় রকমের আশঙ্কা জাগানো তথ্য। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে- দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো কি দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা বাজার হারাতে বসেছে?
লন্ডনভিত্তিক সংস্থা আইএইচএস বলছে, আগস্ট মাসে এশিয়ার এই দেশগুলোর পারচেজিং ম্যানেজারস ইন্ডেক্স (পিএমআই) ৪৪.৫-এ নেমে এসেছে। শুধু এক মাস এমন হলে বিশেষ চিন্তার কিছু ছিল না, কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বিষয়টিকে দুশ্চিন্তার মনে করছেন। কারণ, এই নিয়ে টানা তিন মাস দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পিএমআই ৫০-এর নিচে নেমেছে।
আইএইচএস মার্কিট-এর অর্থনীতিবিদ লুইস কুপার বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে গিয়ে জানান, ‘‘(পিএমআই-এর) সবচেয়ে দ্রুতগতির পতন লক্ষ্য করা গেছে মিয়ানমার, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায়।
কারখানা বন্ধের হিড়িক
করোনাবিধি ও লকডাউনের কড়াকড়ির প্রভাবে সামর্থ অনুযায়ী উৎপাদন অব্যাহত রাখতে না পারায় থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের মতো দেশগুলোতে অনেক কারখানা মালিক এখন বিপর্যস্ত। অক্সফোর্ড ইকোনমিক্স-এর এশিয়া অঞ্চলের অর্থনীতিবিদ সিয়ান ফেনার জানান, সম্প্রতি ভিয়েতনামের যেসব প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে টেলিকমিউনিকেশন খাতের বিভিন্ন পণ্য বাজারজাত করত, তারা কোভিড পরিস্থিতির কারণে খুব সংকটে পড়েছে।
আইএইচএস মার্কটি-এর এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের প্রধান রাজিব বিশ্বাস জানান, ভিয়েতনামের কারখানাগুলোর দুরবস্থার প্রভাব সারাবিশ্বেই ক্রমবর্ধমান হারে পড়ছে। তিনি আরও জানান, এ পর্যন্ত শুধু ভিয়েতনামের দক্ষিণাঞ্চলেই একশরও বেশি সামুদ্রিক খাবার প্রক্রিয়াজাত করার কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এ ছাড়া সে দেশের এক তৃতীয়াংশ পোশাক কারখানা এখন অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
করোনাকালে স্যামসাং এবং টয়োটার উৎপাদনও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। রাজিব বিশ্বাস জানান, স্যামসাং বিশ্বের অন্য অঞ্চলে তাদের যে উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে, সেগুলোতে উৎপাদন বাড়িয়ে ক্ষতি অনেকটাই এড়াতে পেরেছে। তবে টয়োটা তা পারেনি। করোনার কারণে বেশকিছু অ্যামেম্বল কারখানা বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন তারা।
সূত্র : ডয়চে ভেলে
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ