ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার সম্ভাব্য হামলা এড়াতে মস্কোয় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনা করলেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস।
রাশিয়ার প্রতি নরম মনোভাব ও দুর্বলতার অভিযোগ কিছুটা হলেও ঝেড়ে ফেলতে পারলেন জার্মান চ্যান্সেলর।
মঙ্গলবার মস্কোয় ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনার পর সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেন সংকট সম্পর্কে জার্মানি তথা পশ্চিমা বিশ্বের অবস্থান স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিলেন তিনি।
রাশিয়ার প্রতি কূটনীতি, সংলাপ ও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলেও ইউক্রেনের ঐক্য ও অখণ্ডতা নিয়ে কোনো রকম আপস মানতে তিনি যে প্রস্তুত নন, সে বিষয়ে কোনো সংশয় রাখেননি শলৎস।
মঙ্গলবারের সংবাদ সম্মেলনে কোনো রাখঢাক না করেই দুই নেতা বাকযুদ্ধে মেতে ওঠেন। শলৎস তার প্রজন্মে ইউরোপের মাটিতে যুদ্ধ হয়নি, এমন দাবি করায় পুতিন ১৯৯৯ সালে তৎকালীন যুগোস্লাভিয়ার উপর ন্যাটোর হামলার দৃষ্টান্ত তুলে ধরেন।
শলৎস বলেন, কসোভোয় আলবেনীয় জনগোষ্ঠীর গণহত্যা এড়াতেই সেই পদক্ষেপ নিতে হয়েছিল। পুতিন ইউক্রেনের পূর্বে ডনবাস অঞ্চলে সংখ্যালঘু রুশ জনগোষ্ঠীর গণহত্যা এড়ানোর দাবি করলেও শলৎস সে ক্ষেত্রে ‘গণহত্যা’ সংজ্ঞাটি মেনে নেননি। অদূর ভবিষ্যতে ন্যাটোর আরও পূর্বমুখী সম্প্রসারণের কোনো সম্ভাবনা নেই, এমনটা দাবি করে শলৎস বলেন, অন্তত তাদের কার্যকালে এমন কোনো অ্যাজেন্ডা রূপায়িত হবে বলে তার মনে হয় না।
কিছুটা কৌতুকের সঙ্গে জার্মান চ্যান্সেলর মন্তব্য করেন, রুশ প্রেসিডেন্ট কতকাল ক্ষমতায় থাকার পরিকল্পনা করছেন, সেটা তার জানা নেই। সময়টা দীর্ঘ হলেও অনন্তকাল হতে পারে না। রাশিয়ার এক মানবাধিকার সংগঠনের উপর নিপীড়ন ও বিরোধী নেতার প্রতি ‘অন্যায়’ পদক্ষেপ নিয়ে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেও শলৎস পুতিনের অস্বস্তি বাড়িয়ে দেন।
শলৎসের মস্কো সফরের ফলে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার আশঙ্কা কতটা কমলো, সে বিষয়ে দন্দ্ব রয়ে গেছে। মঙ্গলবারই রাশিয়া সীমান্ত থেকে কিছু সৈন্য ফিরিয়ে এনেছে। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সতর্ক করে বলেছেন, যে এখনো প্রায় দেড় লাখ রুশ সৈন্য ইউক্রেনের সীমন্তে মোতায়েন রয়েছে। মঙ্গলবার এক সাইবার হামলার জন্যও ইউক্রেন নাম না করেও রাশিয়াকে দায়ী করেছে। হ্যাকারদের কারসাজির কারণে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও দুটি ব্যাংকের নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়েছিল। রাশিয়া সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। সাইবার হামলা দিয়ে শুরু করে সে দেশ সামরিক অভিযান চালাতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের একাংশ আশঙ্কা করছেন।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন টেলিফোনে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের সঙ্গে আলোচনায় আবার সে দেশের উপর কড়া নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিয়েছেন।
তিনি ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়ার তৎপরতা কমানোর ডাক দেন, তবে সেই পদক্ষেপ স্বচ্ছ ও অর্থবহ হতে হবে। ন্যাটোর মহাসচিব ইয়েন্স স্টলটেনব্যার্গ কূটনৈতিক স্তরে আলোচনা সম্পর্কে সন্তোষ প্রকাশ করলেও সামরিক অভিযানের আশঙ্কা দূর হচ্ছে বলে মনে করছেন না। বিশেষ করে রাশিয়া যেভাবে সৈন্য সরালেও প্রায়ই সামরিক সরঞ্জাম রেখে যায়, তার ফলে দ্রুত সামরিক তৎপরতা চালানোর সুযোগ থেকে যায় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সূত্র: ডয়চে ভেলে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন