কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ নিয়ে পথে নেমেছেন। এই পদযাত্রায় রাহুল টানা পাঁচ মাস ধরে ৩৫০০ কিলোমিটারের বেশি পথ পাড়ি দেবেন বলে জানিয়েছে কংগ্রেস সূত্র। এই যাত্রা আসলে রাহুলের ভাবমূর্তি থেকে ‘পার্ট টাইম’ রাজনীতিকের তকমা ঝেড়ে ফেলার পরীক্ষাও বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ, পুরোটা না-হলেও রাহুল নিজে বেশিরভাগ রাস্তাই হাঁটবেন বলে কংগ্রেস নেতাদের দাবি।
রাহুলের ঘোষণা অনুযায়ী এই যাত্রার উদ্দেশ্য হল বিভাজনের নীতির বিরুদ্ধে কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষ, ঐক্যের মতাদর্শ তুলে ধরা। কিন্তু তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারী থেকে এই যাত্রা শুরু হলেও অধিকাংশ বিজেপি শাসিত রাজ্যের মধ্যে দিয়েই এই যাত্রা যাবে না বলেই জানিয়েছে ভারতের গণমাধ্যম। নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের গুজরাটে এই যাত্রা ঢুকবে না। যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশকে সামান্য ছুঁয়ে যাবে। মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক, হরিয়ানা এবং মহারাষ্ট্র; শুধুমাত্র এই চারটি বিজেপি বা বিজেপি জোট শাসিত রাজ্যেই রাহুলের ভারত জোড়ো যাত্রা পৌঁছাবে। তাতে কি দেশ জুড়ে কংগ্রেসের পালে হাওয়া লাগবে? কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের দাবি, ‘ভারত জোড়ো যাত্রা দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তন আনবে, কংগ্রেসের জন্যও সঞ্জীবনী হয়ে উঠবে।’
বিবিসির বিশ্লেষণী প্রতিবেদনে রাহুলের এই যাত্রার নানা দিক উঠে এসেছে। এক জরিপ বলছে রাহুল এখনও ভারতে অতোটা জনপ্রিয় হয়ে ওঠেননি। এক লাখ ২০ হাজার মানুষের অংশ নেওয়া ওই জরিপে দেখা গেছে মাত্র ৯ শতাংশ মানুষ রাহুলকে ভারতের ভবিষ্যত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান।
তবে কংগ্রেসের আসা এই যাত্রা রাহুলের জনপ্রিয়তা ও ইমেজ বাড়াতে সাহায্য করবে। জয়া হাসান নামের এক কংগ্রেসপন্থি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, ‘এই লংমার্চ তাকে জাতীয় নেতা হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ দেবে।’ তার দাবি, বর্তমানে ভারতজুড়ে নানাভাবে বিভাজনের রাজনীতি চলছে সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে রাহুলের এই একতার আহ্বানকে মানুষ স্বাগত জানাবে।
১৯৮৩ সালে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা চন্দ্র শেখরও ছয় মাসব্যাপী লং মার্চ করেছিলেন, হেঁটেছিলেন ৪ হাজার কিলোমিটার। তিনি নিজেকে তৃণমূলের নেতা প্রমাণ করতে এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তাকে সেই সময় মানুষ ম্যারাথন ম্যান উপাধি দিয়েছিলেন। তবে এই লংমার্চ নির্বাচনে বিশেষ কোন প্রভাব ফেলেনি। পরের বারও কংগ্রেসই জয়লাভ করেছিল, ইন্ধিরা গান্ধীর হত্যাকাণ্ডে জনসাধারণের সহানুভূতি পেয়েছিল কংগ্রেস।
তবে ভারতের পদযাত্রার ইতিহাসে আরও উল্লেখযোগ্য ঘটনা বিজেপি নেতা আদভানির দেশব্যাপী ট্রাক যাত্রা। তিনি একটি মিনি ট্রাকে ১০০০০ কিলোমিটার যাত্রার পরিকল্পনা করেছিলেন। যা দেখতে অনেকটা রথ যাত্রার মতো। পশ্চিমের প্রাচীন মন্দির শহর সোমনাথ থেকে অযোধ্যা পর্যন্ত ছিল এই যাত্রার পরিকল্পনা।
যাত্রা শুরুর একমাস পর আদভানিকে গ্রেফতার করে তার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী লালু প্রসাদ যাদবের প্রশাসন। লালু তখন বিহারের শাসন করছিলেন। যাদব বলেছিলেন, যে তিনি 'মানবতাকে বাঁচাতে' এটি করেছিলেন। তবে আদভানির গ্রেফতার বিজেপিকে নতুন মাত্রা দেয়।
ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ১৯৩০ সালে সালে গুজরাটের পশ্চিম উপকূলে মহাত্মা গান্ধীও ৩৮০ কিলোমিটার পদযাত্রা করেছিলেন। ভারতের ইতিহাসে এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদযাত্রা। তখন ৬১ বছর বয়সী গান্ধীকে গ্রামবাসীরা আতিথেয়তা ও ভালোবাসায় বরণ করেছিল, তরান্বিত হয়েছিল ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন।
লংমার্চের এম মিশ্র প্রতিক্রিয়ার দেশে এখন দেখার বিষয় রাহুলের এই দীর্ঘ যাত্রা তার দলকে পুনরুজ্জীবিত করে কিনা, রাজনৈতিক পরিবর্তনে রাখবে কিনা কোনো ভূমিকা। যদিও জ্যেষ্ঠ কংগ্রেস নেতা শশী থারুর বলেছেন, ‘ভারতের আত্মা বাঁচানো এই আন্দোলন লং মার্চের পরও অব্যাহত থাকবে।’
সূত্র: বিবিসি
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল