২০ মার্চ, ২০২৩ ১৪:৪৭

যে কারণে বাসার নিচে বাংকার বানাতে চাচ্ছেন ইউরোপের বিত্তবানরা

অনলাইন ডেস্ক

যে কারণে বাসার নিচে বাংকার বানাতে চাচ্ছেন ইউরোপের বিত্তবানরা

বাসার নিচে বাংকার বানাতে চাচ্ছেন ইউরোপের বিত্তবানরা

যুদ্ধ ও মহামারির মতো সংকট আজ শুধু ইতিহাসের পাতায় সীমিত নেই। ইউরোপের মানুষ বাস্তব জীবনেই সেই অভিজ্ঞতার মুখোমুখি। পোল্যান্ডের এক কোম্পানি বিত্তবান মানুষের নিরাপত্তার অভিনব ব্যবস্থা করছে।

ডাভিড রিবিকি পোল্যান্ডের পশ্চিমাঞ্চলে এক পারিবারিক ব্যবসা চালান। ফেরোপ্লাস্ট কোম্পানির কারখানায় ৩০০ শ্রমিক ধাতু শিল্পের জন্য যন্ত্রাংশ তৈরি করেন। বিশেষ করে গাড়ি শিল্পখাত এই কোম্পানির অন্যতম প্রধান গ্রাহক।

কিন্তু সম্প্রতি এই কোম্পানি বাংকার ও তেজস্ক্রিয় বিকিরণ থেকে সুরক্ষার শেল্টার তৈরির কাজ শুরু করেছে। একটি সিঁড়ি দিয়ে ভবিষ্যতে মাটির নিচে বাংকারে নেমে যাওয়া যাবে। সেই বাংকারের সামনের দরজা তৈরি হচ্ছে। 

নিজের কারখানা ঘুরিয়ে দেখানোর সময় ডাভিড বলেন, ‘‘এ মুহূর্তে ওয়েল্ডার বুলেটপ্রুফ এআর ইস্পাত দিয়ে শেল্টারের স্টিল হ্যাচ ওয়েল্ডিং করছেন। ভেতরেও বাড়তি তালা রয়েছে। মোট ছ'টি তালা থাকায় বাইরে থেকে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। পরিবারের সঙ্গে এখানে লুকিয়ে থাকা যায়। ওয়েল্ডিংয়ের কোনো প্রয়োজন নেই। ট্রাকে করে তুলে এনে কংক্রিটের খাঁজে নামিয়ে দেড় মিটার মাটি চাপা দিলেই হবে।’’

গ্রাহকের বাড়ির পেছনে ফলআউট শেলটার তৈরি করা হয়েছে। সেই প্রণালির মধ্যে আপৎকালীন বিদ্যুৎ নিশ্চিত করতে এক ডিজেল জেনারেটর রয়েছে। বাতাস নির্মল রাখার ব্যবস্থাও রয়েছে। 

ডাভিড রুবিকি বলেন, ‘‘বাইরে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ঘটলে এই প্রণালি গামা রশ্মির প্রতিটি রেডিয়েশন পার্টিকেল বা কণা ফিল্টার করে। শেল্টারের মধ্যে বাতাস চালান করা হয়। একেবারেই কোনো বিদ্যুৎ না থাকলে হাতে করে বিদ্যুৎ সৃষ্টির উপায়ও রয়েছে।” 

বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে প্রতি ঘণ্টায় ২০ মিনিট ধরে হ্যান্ড ক্র্যাংক ঘোরালে তাজা বাতাস প্রবেশ করবে। বিলাসবহুল এই ফলআউট শেলটারে আটজন পর্যন্ত মানুষ ভালোভাবেই বাস করতে পারেন। শোবার জায়গা, বাথরুম, রান্নাঘর ও বসার ঘরও রয়েছে। এমন সুরক্ষার মূল্য সাড়ে তিন থেকে ছয় লাখ ইউরো হতে পারে।

কিন্তু ক্রেতারা কেন এমন বাংকার তৈরি করাতে চান? ফেরোপ্লাস্ট কোম্পানির কর্ণধার রুবিকি এমন চাহিদা ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘দুই বছর আগে আমরা কোভিডের মুখে পড়েছিলাম। এখন যুদ্ধ চলছে। কেউ ভাবেনি যে, ইউরোপে যুদ্ধ হবে। কিন্তু এখন সেটাই ঘটছে। চীন ও তাইওয়ান, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সংঘাত রয়েছে। এখন মিডিয়ায় শুনছি যে খাদ্য সংকট আসছে। পানির সংকট। কেউ জানে না কী ঘটতে চলেছে। তাই নিরাপদ বোধ করতে হলে আমরা সেই সমাধানসূত্র দিচ্ছি।’’

ডাভিড রিবিকি অ্যামেরিকার ক্রেতা ও জার্মান ডিসট্রিবিউটারদের জন্য বাংকার তৈরি করেন। যেমন বার্লিনভিত্তিক বিএসএসডি কোম্পানি তার গ্রাহক। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হবার পর বিক্রি অনেক বেড়ে গেছে। 

বিএসএসডি কোম্পানির মার্ক শ্মিশেন বলেন, ‘আমাদের ওয়েবসাইটের ভিজিটের সংখ্যা দেখেও সেটা টের পেয়েছি। আগে দিনে প্রায় ১০০ ভিজিটার আসতো। আচমকা সেটা বেড়ে ১০,০০০ হয়ে উঠলো। ভাবতেই পারছেন এর কত বড় সম্ভাবনা রয়েছে। তখন আমরা ভাবলাম, যুদ্ধ হয়তো অনেকদিন ধরে চলবে। তারপর শেষ হবে। ফলে আগ্রহও কমে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তার বিপরীতটাই ঘটলো।’

এই কোম্পানি বিভিন্ন মাপের বাংকার তৈরি করে। যেমন ছোট প্যানিক রুমের মূল্য ১৫,০০০ ইউরো। সেটির বৈশিষট্য সম্পর্কে ডাভিড রুবিকি বলেন, ‘‘এই ঘরে মাত্র আধ ঘণ্টা কাটানো যায়। সে কারণে নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে পুলিস অ্যালার্মও রয়েছে। কিছু ঘটলে আপনি পরিবারসহ সেখানে আবদ্ধ হয়ে বোতাম টিপে শুধু অপেক্ষা করতে পারেন।”

শ্রমিকরা এই মুহূর্তে বেশ কয়েকটি বাংকার তৈরি করছেন। ইউরোপের বিত্তবান ব্যক্তিরা নিজেদের বাসার নিচে শেলটার চেয়ে কোম্পানির কাছে অর্ডার দিয়েছেন।

সূত্র : ডয়চে ভেলে

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ 


 

  
 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর