তাইওয়ান ঘিরে আবারও সামরিক তৎপরতার বৃদ্ধি করেছে চীন। তাইওয়ানের চারপাশে ৪১টি চীনা সামরিক বিমান এবং জাহাজ শণাক্ত করা হয়েছে। স্থানীয় সময় আজ শুক্রবার তাইওয়ান এ কথা জানিয়েছে বলে এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় সফরে বের হবেন প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তে এবং এই সফরের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে হাওয়াইতে যাত্রাবিরতি নিবেন তিনি। প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এই সফরের খবরে বেইজিংয়ে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে।
তাইওয়ান ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, আসন্ন দিনগুলোতে তাইওয়ানের নিকটে সামরিক মহড়া শুরু করতে পারে চীন। এই মহড়ার অজুহাত হিসেবে লাইয়ের প্রশান্ত মহাসাগরীয় সফর ও যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রাবিরতিকে চীন ব্যবহার করতে পারে বলে ধারণা করছেন তারা। বেইজিং স্ব-শাসিত তাইওয়ানকে তাদের ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে দাবি করে এবং সার্বভৌম জাতি হিসেবে এই দাবির যে কোনো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিরও বিরোধিতা করে। চীন তাইওয়ানের আশেপাশে প্রায় প্রতিদিনই যুদ্ধবিমান, ড্রোন এবং যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে বলে দাবি করে তাইওয়ান।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই সংখ্যা আরো বৃদ্ধির পেয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটি। চলতি বছর তাইওয়ানের চারপাশে দুটি বড় আকারের যুদ্ধ মহড়া পরিচালনা করেছে চীন। এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ স্থানীয় সময় শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ৩৩টি চীনা যুদ্ধবিমান এবং আটটি নৌবাহিনীর জাহাজ আকাশসীমা এবং জলসীমায় শণাক্ত করা হয় বলে তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি যুদ্ধবিমান গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চীনের ‘যৌথ যুদ্ধ প্রস্তুতি টহল’-এ অংশ নিয়েছিল।
তাইওয়ানের মন্ত্রণালয়ের প্রতিদিন প্রকাশিত পরিসংখ্যানের এএফপি সমীক্ষা অনুসারে, গত তিন সপ্তাহেরও বেশি সময়ের মধ্যে আজকের সংখ্যাটি ছিল সর্বোচ্চ। এদিকে তাইওয়ান অভিযোগ করেছে, চীনা বেলুনও দ্বীপের কাছ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে। তাইওয়ানের ইন্সটিটিউট ফর ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি রিসার্চের সামরিক বিশেষজ্ঞ সু জু-ইয়ুন এএফপিকে বলেছেন, ‘লাইয়ের সফরের প্রতিক্রিয়ায় চীন তুলনামূলকভাবে আরো বড় আকারের সামরিক মহড়া করতে পারে, এই আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।’
প্রেসিডেন্ট লাই তাইওয়ানের সার্বভৌমত্বের একজন রক্ষক। গত মে মাসে দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি প্রথম বিদেশ সফরে যাচ্ছেন। লাই শনিবার প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সফর শুরু করবেন। তার যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রাবিরতির বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক ঘোষণা শুক্রবার আসতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। তাইওয়ানের সরকারি কর্মকর্তারা প্রশান্ত মহাসাগরীয় বা লাতিন আমেরিকা সফরের সময় মার্কিন মাটিতে যাত্রাবিরতি নেয়। এ বিষয়ে চীন ক্ষুব্ধ হয়ে কখনও কখনও দ্বীপের চারপাশে সামরিক মহড়া দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়। চীন ইতিমধ্যেই লাই-এর পরিকল্পিত সফরের জন্য ক্ষোভ ঝেড়েছে।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বৃহস্পতিবার জানান, তাইওয়ানের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টাকে ‘দৃঢ়ভাবে চূর্ণ’ করা হবে। এদিকে তাইওয়ানের তামকাং ইউনিভার্সিটির সামরিক বিশেষজ্ঞ লিন ইং-ইউ বলেন, ‘সফরের সময় লাই-এর বক্তব্যের ভিত্তিতে চীন তাদের প্রতিক্রিয়া দেখাবে।’ তিনি বলেন, ‘চীন সামরিক মহড়া চালাতে পারে, কিন্তু সেগুলো বড় নাও হতে পারে। এটা নির্ভর করবে প্রেসিডেন্ট লাই কী বলেন তার ওপর।’ লিন এএফপিকে এটাও বলেন, ‘বর্তমান আবহাওয়া মহড়ার জন্য খুব ভালো নয়।’
বিডি-প্রতিদিন/শআ