রবিবার, ১১ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা
জোভেনেল মইসি হত্যাকান্ড

সামরিক সহযোগিতা চায় হাইতি, যুক্তরাষ্ট্রের ‘না’

সামরিক সহযোগিতা চায় হাইতি, যুক্তরাষ্ট্রের ‘না’

হাইতির প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মইসিকে হত্যাকান্ডের পর দেশটির ভিতরকার গুরুত্বপূর্ণ সব স্থাপনার নিরাপত্তায় হাইতি যুক্তরাষ্ট্রকে সেনা পাঠানোর অনুরোধ করলেও ওয়াশিংটন তাতে রাজি হয়নি বলে জানিয়েছেন ঊর্ধ্বতন এক মার্কিন কর্মকর্তা। ‘এখন সেখানে সেনা সহায়তা পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা নেই,’ বলেছেন তিনি। দেশটির ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী ক্লদ জোসেফের কার্যালয় থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সেনা সহায়তা চেয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল। হাইতির যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসকে পাঠানো বুধবারের তারিখ দেওয়া ওই চিঠিটি দেখার কথা জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। চিঠিতে হাইতির পক্ষ থেকে তাদের ন্যাশনাল পুলিশকে সহায়তা এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সুরক্ষা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সেনা চাওয়া হয়। একই ধরনের এবং একই তারিখ দেওয়া একটি চিঠি জোসেফের কার্যালয় থেকে জাতিসংঘকেও পাঠানো হয়েছে। হাইতির জাতিসংঘ কার্যালয়ে পাঠানো ওই চিঠিটিও রয়টার্স দেখেছে।

জাতিসংঘের পলিটিকাল অ্যান্ড পিসবিল্ডিং বিভাগের মুখপাত্র লুইস দিয়াজ জানান, হাইতিতে জাতিসংঘের রাজনৈতিক মিশন চিঠিটি পেয়েছে এবং তারা সেটি পর্যালোচনা করে দেখছে। কোনো দেশে শান্তিরক্ষী পাঠানোর যে কোনো পরিকল্পনায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সায় লাগে। তাদের অনুমোদন ছাড়া জাতিসংঘ কোথাও শান্তিরক্ষী মোতায়েন করতে পারবে না।

হাইতির নির্বাচন বিষয়ক মন্ত্রী ম্যাথিয়াস পিয়েরে জানান, বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেনের সঙ্গে আলোচনায়ও হাইতির অন্তর্র্বর্তী প্রধানমন্ত্রী জোসেফ তার দেশে মার্কিন সেনা পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

‘আমরা এমন একটি পরিস্থিতিতে আছি, যেখানে আমাদের বন্দর, বিমানবন্দর ও জ্বালানি স্থাপনাগুলো হামলার লক্ষ্যবস্তু হতে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি,’ বলেন পিয়েরে। কেবল দেশের অবস্থা স্থিতিশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর নিরাপত্তার জন্যই বিদেশি সেনা চাওয়া হচ্ছে না, সেপ্টেম্বরেই যেন হাইতিতে প্রেসিডেন্ট ও আইন পরিষদের নির্বাচন করা যায়, তা নিশ্চিতেও এ সামরিক সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। হাইতিতে আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট ও আইন পরিষদের নির্বাচন হওয়ার কথা। বুধবার হাইতির পুলিশ ময়িস হত্যায় ২৮ বিদেশি ভাড়াটিয়া সেনার একটি দল অংশ নেয় বলে জানায়। রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বন্দুকযুদ্ধের পর ওই দলটির ১৭ জনকে আটক করা হয়। বন্দুকযুদ্ধে দলটির তিন সদস্য নিহত হয়েছে, আটজন এখনো পলাতক। বিদেশি এই ‘হিট স্কোয়াডের’ বেশিরভাগ সদস্যই কলম্বিয়ার এবং তারা অবসরপ্রাপ্ত সৈন্য বলেও জানিয়েছে হাইতির পুলিশ। যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় এই দেশটিতে সেনা পাঠানোর অনুরোধে সাড়া না দিলেও তারা ময়িস হত্যাকান্ডের তদন্তে সহায়তা করতে এফবিআই ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের কর্মকর্তাদের পাঠানোর আশ্বাস দিয়েছে। প্রেসিডেন্টকে হত্যার এ ঘটনা সহিংসতা কবলিত দরিদ্র দেশ হাইতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেশটিতে জরুর অবস্থা বলবৎ আছে; তবে প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর পর কে যে দেশটির দায়িত্বে, তা নিয়ে অস্পষ্টতা এখনো কাটেনি। এদিকে হাইতিতে এফবিআই এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগের কিছু কর্মকর্তাকে পাঠাবে যুক্তরাষ্ট্র। নিহত হাইতির প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোইসি হত্যার তদন্তে সহায়তার জন্য তাদের দেশটিতে পাঠানো হবে। শুক্রবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এমন তথ্য জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি। তিনি জানান, যত দ্রুত সম্ভব এফবিআই এবং নিরাপত্তা কর্মকর্তারা হাইতি সফর করবেন। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি বলেন, সেখানকার পরিস্থিতি এবং আমরা কীভাবে তাদের সহায়তা করতে পারি সেটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। হাইতি পুলিশ জানিয়েছিল, ২৮ জন বিদেশি ভাড়াটে সেনার একটি দল বুধবার প্রেসিডেন্টের বাসভবনে হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য অস্থিরতা মোকাবিলায় সরকার এরই মধ্যে দুই সপ্তাহের জন্য দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। বিবিসি।

সর্বশেষ খবর