রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন তিন বছর আগে যুদ্ধ শুরুর প্রাথমিক দিনগুলোর পর থেকে প্রথমবারের মতো ইউক্রেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, বেসামরিক লক্ষ্যস্থলগুলোতে হামলা বন্ধ করা নিয়ে আলোচনা করতে আগ্রহী কিয়েভ। তবে জেলেনস্কি সরাসারি পুতিনের সোমবারের প্রস্তাবে সাড়া দেননি। তিনি তার রাত্রিকালীন ভিডিও বক্তৃতায় বলেছেন, ‘বেসামরিকদের ওপর হামলা বন্ধ করবে এমন একটি যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য ইউক্রেন প্রস্তুত আছে।’ রয়টার্স লিখেছে, এই দুই নেতা যুক্তরাষ্ট্রের চাপে আছেন। আলোচনায় কোনো অগ্রগতি না হলে রাশিয়া- ইউক্রেন শান্তি প্রচেষ্টার মধ্যস্থতা থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে যাবে বলে হুমকি দিয়েছে। গত শনিবার খ্রিস্টানদের ইস্টান সানডে পর্ব উপলক্ষে ৩০ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল মস্কো। কিয়েভ তা মেনে চলবে বলে জানিয়েছিল। কিন্তু পরে উভয়পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে। এখন রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়েই বলছে, তারা আরও যুদ্ধবিরতির জন্য প্রস্তুত।
সোমবার রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনের এক সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলার সময় পুতিন জানান, ইস্টার যুদ্ধবিরতির পর লড়াই আবার শুরু হলেও মস্কো যে কোনো শান্তি উদ্যোগে সাড়া দিতে প্রস্তুত আছে আর কিয়েভের কাছ থেকেও একই প্রতিক্রিয়া আশা করছে। পরে বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সের দেওয়া উদ্ধৃতিতে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভকে বলেন, ‘যখন প্রেসিডেন্ট বলেন যে, বেসামরিক লক্ষ্যস্থলে আঘাত হানার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব, দ্বিপক্ষীয়সহ, তখন তিনি ইউক্রেনীয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনার কথা মনে রেখেই এমন কথা বলেন।’ জেলেনস্কি জানিয়েছেন, আজ ইউক্রেন লন্ডনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় অংশ নেবে। গত সপ্তাহে প্যারিসে এক বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের পথগুলো নিয়ে আলোচনা করেছিল। লন্ডন বৈঠকে এর পরবর্তী আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ শুরু করার পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ দুই পক্ষের মধ্যে সরাসরি আলোচনা হলেও তারপর থেকে উভয়ের মধ্যে এ ধরনের আর কোনো বৈঠক হয়নি।
এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিন সোমবার জানিয়েছে, ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ নাকচ করে দেওয়ার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান মস্কোকে সন্তুষ্ট করেছে। তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চলতি সপ্তাহে শান্তি চুক্তির আশার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে তারা অস্বীকৃতি জানিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। শান্তি স্থাপনকারী হিসেবে স্মরণীয় হতে চাওয়া ট্রাম্প বারবার বলেছেন, তিনি ইউক্রেনের তিন বছরের রক্তক্ষয়ী সংঘাত বন্ধ করতে চান। এই সংঘাতকে তার প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে ছায়াযুদ্ধ হিসেবে বর্ণনা করে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দূত জেনারেল কেইথ কেলগ রবিবার বলেছেন, ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ এখন বিবেচনায় নেই। ট্রাম্প বলেছেন, অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের এই সমর্থনই যুদ্ধের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।-রয়টার্স
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ওয়াশিংটনের বিভিন্ন পর্যায় থেকে শুনেছি যে, ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদের বিষয়টি বাদ দেওয়া হয়েছে। এটি অবশ্যই আমাদের জন্য সন্তুষ্টির বিষয় এবং আমাদের অবস্থানের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। তিনি আরও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এই জোটে ইউক্রেনের সদস্যপদ রাশিয়ার স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলবে এবং বাস্তবে এটি এই সংঘাতের মূল কারণগুলোর একটি। ২০২২ সালে প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ইউক্রেনে সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন, যা স্নায়ুযুদ্ধের পর মস্কো ও পশ্চিমের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংঘাতের সূত্রপাত করে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, পশ্চিম ইউরোপের নেতা ও ইউক্রেন এই আক্রমণকে সাম্রাজ্যবাদী ঘরানার ভূমি দখল হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং রাশিয়াকে পরাজিত করার অঙ্গীকার করেছিলেন। পুতিন এই যুদ্ধকে পশ্চিমের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে দেখেন। তার মতে, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর ন্যাটো সম্প্রসারণ ও মস্কোর প্রভাব বলয়ে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে রাশিয়াকে অপমান করা হয়েছে। ২০০৮ সালের বুখারেস্ট শীর্ষ সম্মেলনে ন্যাটো নেতারা একমত হন যে, ইউক্রেন ও জর্জিয়া একদিন ন্যাটো সদস্য হবে। ২০১৯ সালে ইউক্রেন তার সংবিধান সংশোধন করে ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ণ সদস্যপদের পথে অগ্রসর হওয়ার অঙ্গীকার করে।