ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ইউক্রেনীয়রা দখলদারদের কাছে তাদের এতটুকু ভূমিও ছেড়ে দেবে না। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি। তার এ মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা আগেই অবশ্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শেষ করতে আঞ্চলিক ছাড় দেওয়া হতে পারে।
ট্রাম্প জানান, রাশিয়া ও ইউক্রেন একটি শান্তিচুক্তির অংশ হিসেবে কিছু এলাকা অদলবদল করবে। তার ভাষ্য, ‘বিষয়টি খুব জটিল। তবে কিছু (এলাকা) আমরা ফিরিয়ে আনব, আর কিছু পরিবর্তন হবে। উভয় পক্ষের মঙ্গলের জন্য এলাকাগুলোর অদলবদল হবে। আমরা এ বিষয়ে পরে অথবা আগামীকাল আরও বিস্তারিত বলব।’ ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে আরও ঘোষণা দেন, তিনি আগামী শুক্রবার আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বৈঠক করবেন। এ বিষয়ে জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে কোনো আলোচনা বা সমাধান শান্তির পরিপন্থি হবে।’ ২০২২ সালে পূর্ণমাত্রার আক্রমণ শুরু করার পর থেকে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা দখল করে রেখেছে। তবে এখন পর্যন্ত বড় ধরনের অগ্রগতি পায়নি মস্কো, আর ইউক্রেনীয় পাল্টা আক্রমণেও রুশ বাহিনীকে পিছু হটানো যায়নি।
কোথায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন, জানালেন ট্রাম্প : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধাবসান ইস্যুতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্টের হাই প্রোফাইল বৈঠকটি হবে ১৫ আগস্ট, যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে পোস্ট করা এক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছেন ট্রাম্প। ট্রুথ সোশ্যালের পোস্টে ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বহু প্রতীক্ষিত বৈঠকটি হবে আগামী ১৫ আগস্টে, যুক্তরাষ্ট্রের মহান আলাস্কা অঙ্গরাজ্যে।’ এ পোস্ট দেওয়ার আগে হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ট্রাম্প বলেছিলেন, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে শান্তির স্বার্থে দুই দেশের মধ্যে কিছু অঞ্চল বিনিময় হতে পারে, তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলেন তিনি। এদিকে ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প আসন্ন বৈঠকের তারিখ ও স্থান উল্লেখ করার পর তাতে সায় দিয়েছে রাশিয়াও। এক বিবৃতিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের কার্যালয় ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের জন্য যে সময় ও স্থান নির্ধারণ করেছেন, তা বেশ যুক্তিসংগত।’ পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে পোস্ট করা এক বার্তায় ক্রেমলিন কর্মকর্তা এবং পুতিনের মুখপাত্র ইউরি উশাকভ বলেছেন, ‘আসন্ন বৈঠকে সন্দেহাতীতভাবেই দুই দেশের প্রেসিডেন্টের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হবে ইউক্রেন সংকটের একটি দীর্ঘস্থায়ী শান্তিপূর্ণ সমাধান।’ ট্রাম্পকে রাশিয়া সফরের নিমন্ত্রণও দিয়েছেন উশাকভ। টেলিগ্রাম পোস্টে তিনি বলেছেন, ‘আমরা খুবই খুশি হব যদি দুই দেশের প্রেসিডেন্টের পরবর্তী বৈঠক রাশিয়ায় হয়। আমরা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে রাশিয়া সফরের নিমন্ত্রণ করছি।’ প্রসঙ্গত, ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতির এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদের জন্য ইউক্রেনের আবেদন প্রত্যাহারের দাবিতে কিয়েভের সঙ্গে মস্কোর কয়েক বছর ধরে টানাপোড়েন চলার পর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রুশ বাহিনী। এ যুদ্ধ থামানোর জন্য পুতিনকে গত তিন বছরে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আহ্বান জানিয়েছে, কিন্তু পুতিন নিজের শর্তে অনড় থাকায় সেসব আহ্বানে কোনো কাজ হয়নি। রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট পর্যায়ের বৈঠকের জন্যও একাধিকবার আহ্বান জানানো হয়েছে, তবে পুতিন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কির অনাগ্রহের জন্য তা সম্ভব হয়নি। -বিবিসি ও এএফপি