চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে গতকাল বিশাল সামরিক প্যারেডের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন উত্তর কোরিয়ার সর্বোচ্চ নেতা কিম জং উন এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। সে সময় অভূতপূর্ব এক দৃশ্য চোখে পড়ে। তিয়েনআনমেন স্কয়ারে কিম এবং পুতিনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গল্প করতে করতে রেড কার্পেটের ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন শি জিনপিং। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তির ৮০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটি শির জন্য চীনের সামরিক সক্ষমতার প্রদর্শনের এবং মিত্র দেশগুলোকে একত্রিত করে বাকি বিশ্বকে একটি বার্তা দেওয়ার জন্য অসাধারণ অনুষ্ঠান হিসেবেই দেখা হচ্ছে। কুচকাওয়াজের পর প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, বিশ্ব এখনো ‘শান্তি অথবা যুদ্ধের বিকল্পের মুখোমুখি’। এমন পরিস্থিতিতে চীন ‘অপ্রতিরোধ্য’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এই সামরিক মহড়ায় ২০ হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ পাল্লার বিশাল নতুন আন্তমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রদর্শন করেছে চীন। তবে চীনের এই সামরিক মহড়ায় চটেছেন ট্রাম্প। এই তিন নেতা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন বলে অভিযোগ তুলছেন তিনি। শি জিনপিংকে উদ্দেশ করে ট্রাম্প ট্রুথ সোশ্যালে এক পোস্টে লিখেছেন, ভ্লাদিমির পুতিন এবং কিম জং উনকে আমার উষ্ণ শুভেচ্ছা জানাই, কারণ আপনারা আমেরিকার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। বেইজিংয়ে যে সামরিক প্যারেডের আয়োজন করা হয়েছে, সেটার মাধ্যমে নিজেদের অর্থনৈতিক, সামরিক এবং কূটনৈতিক ক্ষমতা প্রদর্শন করতে চাইছে চীন। স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হচ্ছে, যে কোনো দ্বন্দ্বে যুক্তরাষ্ট্রকে মোকাবিলার ক্ষমতা আছে বেইজিংয়ের।
চীনের সামরিক কুচকাওয়াজে কেন নেই মোদি : মাত্র দুই দিন আগেও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে গতকাল চীনের সামরিক কুচকাওয়াজে উপস্থিত ছিলেন না তিনি। তিন নেতার হাসিমুখে আলাপের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছিল, যাকে কেউ কেউ ওয়াশিংটনের ওপর নির্ভরশীল নয়; এমন একটি নতুন বিশ্বব্যবস্থার সূচনা হিসেবেও দেখেছিলেন। তাই, অনেকেরই আশা করা স্বাভাবিক ছিল, মোদি আবারও শি ও পুতিনের সঙ্গে মঞ্চ ভাগাভাগি করবেন।-এএফপি
কিন্তু বাস্তবতা আরও জটিল। রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করতে দিল্লির অস্বীকৃতির জন্য ২৫ শতাংশ জরিমানাসহ ভারতের ওপর ডোনাল্ড ট্রাম্পের ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ দিল্লি ও বেইজিংয়ের মধ্যে চলমান শান্তি আলোচনাকে আরও প্রয়োজনীয় করে তোলে। কিন্তু এশিয়ার শক্তিধর এই দুই দেশের এখনো অনেক অন্তর্নিহিত সমস্যা সমাধানের বাকি রয়েছে। তাদের একে অপরের বিরুদ্ধে এখনো অনেক ক্ষেত্রে উচ্চ শুল্ক কার্যকর আছে। ভারত চীনের সঙ্গে চলমান ৯৯ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্যঘাটতি সম্পর্কেও সতর্ক। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় তাদের সৈন্যদের মধ্যে সংঘর্ষের পর ভারতের জনগণের মধ্যে চীনের বিরুদ্ধে রোষ তৈরি হয়। ফলে ভারত ও চীনের একে অপরের সামরিক শক্তির প্রশংসা করার মতো সময় এখনো আসেনি। ভারত বরং তার সাম্প্রতিক ক্ষত মেটানোর চেষ্টা করছে, যেখানে কয়েকদিন আগেই দিল্লি উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, গত মে মাসে সংঘর্ষে পাকিস্তান যে অস্ত্র ব্যবহার করেছে তার বেশির ভাগই বেইজিং থেকে এসেছে। ‘বিশ্বস্ত বন্ধু’ হিসেবে পরিচিত ট্রাম্পের কাছ থেকে অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপের পর দিল্লি-বেইজিং সম্পর্ককে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি ভারতীয় গণমাধ্যমে উঠে আসে। তবে চীনে সামরিক কুচকাওয়াজে যোগদান না করার পেছনে মোদির নিজস্ব হিসাব-নিকাশ রয়েছে বলেই ভাবা হচ্ছে।