জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে একটি প্রস্তাব বিপুল ভোটে অনুমোদন পেয়েছে। ইসরায়েল এ ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করলেও জাতিসংঘ তা কার্যকর রাখতে অনড় রয়েছে। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে এ ভোটাভুটি হয়। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিয়েছে সাধারণ পরিষদের ১৪২টি দেশ। বিপক্ষে ভোট দিয়েছে মাত্র ১০টি দেশ। তাদের মধ্যে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে। ভোটদানে বিরত ছিল ১২টি দেশ। সাধারণ পরিষদে প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিল ফ্রান্স ও সৌদি আরব। এ প্রস্তাবকে ‘নিউইয়র্ক ঘোষণা’ বলা হচ্ছে। ঘোষণায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলা যেমন নিন্দনীয়, তেমনি গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার বোমাবর্ষণ, অবরোধ ও অনাহারও অমানবিক। এতে সৃষ্ট ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তুলে ধরে তা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। পাশাপাশি দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের জন্য সুনির্দিষ্ট, সময়সীমা-সাপেক্ষ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আগের দিনই ঘোষণা দেন, ফিলিস্তিন কখনোই স্বাধীন রাষ্ট্র হবে না। জাতিসংঘের ঘোষণাও প্রত্যাখ্যান করে তেল আবিব। শুক্রবার ভোটের পর ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওরেন মারমোরস্টেইন বলেন, ঘোষণায় হামাসকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে উল্লেখ না করাই প্রমাণ করে যে, সাধারণ পরিষদ বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন এক রাজনৈতিক সার্কাসে পরিণত হয়েছে। যদিও, ইসরায়েলের প্রত্যাখ্যান উপেক্ষা করে নিজেদের ঘোষণায় অনড় থাকার সিদ্ধান্ত জানায় জাতিসংঘ। ভোটের ফলাফলের পরিপ্রেক্ষিতে ২২ সেপ্টেম্বর উচ্চপর্যায়ের সাধারণ পরিষদ বৈঠকে কিছু দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে পারে বলেও জানায় গণমাধ্যম।
ফিলিস্তিনপন্থি মিছিলে হাজার হাজার মানুষ : নিউজিল্যান্ডের সর্ববৃহৎ শহর অকল্যান্ডে ফিলিস্তিনপন্থি এক মিছিলে হাজার হাজার মানুষ অংশ নিয়েছে; গাজায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দেশটিতে ফিলিস্তিন নিয়ে এত বড় সমাবেশ আর দেখা যায়নি। গতকাল স্থানীয় সময় সকালে অকল্যান্ডের কেন্দ্রস্থলে এ ‘মার্চ ফর হিউম্যানিটিতে’ ৫০ হাজারের মতো মানুষ অংশ নিয়েছে বলে আয়োজক গোষ্ঠী আওতেয়ারোয়া ফর প্যালেস্টাইনের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। তবে নিউজিল্যান্ড পুলিশ বলছে, মিছিলে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল হাজার বিশেক। আওতেয়ারোয়া ফর প্যালেস্টাইনের মুখপাত্র আরামা রাতা বলেছেন, গাজায় ২০২৩ সালের শেষদিকে সংঘাত শুরু হওয়ার পর ফিলিস্তিনের সমর্থনে এখন পর্যন্ত যত মিছিল হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে গতকালেরটাই হলো সবচেয়ে বড়। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর তেল আবিব গাজায় সর্বাত্মক অভিযান শুরু করে। সেই অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ। ভূখণ্ডটিতে খাবারের সংকট বিস্তৃত অঞ্চলে অনাহার পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে বলে দাবি করছে দাতা সংস্থাগুলো। গতকাল অকল্যান্ডের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অনেকের হাতে ফিলিস্তিনি পতাকা এবং ‘গণহত্যাকে স্বাভাবিক বানিয়ে ফেলো না’ এবং ‘মেরুদণ্ড সোজা করো, ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াও’ এ ধরনের নানান স্লোগান লেখা ব্যানার দেখা গেছে বলে নিউজিল্যান্ডের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম রেডিও নিউজিল্যান্ড জানিয়েছে। -রয়টার্স
আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে এ ধরনের একটি মিছিল আইকনিক হারবার ব্রিজে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল। আয়োজকরা ওই মিছিল থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে অকল্যান্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু বন্ধ করতে চাইলেও তীব্র বাতাসের কারণে শুক্রবার ওই পরিকল্পনা থেকে সরে আসে, বলেছেন রাতা। মিছিল থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি এবং সংশ্লিষ্ট সব রোড ফের যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে, মিছিলের পর এমনটাই বলেছে অকল্যান্ড পুলিশ। আওতেয়ারোয়া ফর প্যালেস্টাইন বলছে, তারা চান নিউজিল্যান্ডের মধ্য-ডান জোট সরকার যেন ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। আগস্টে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফার লাক্সন গাজায় মানবিক ত্রাণ ঢোকার অনুমতি না দেওয়াসহ ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে ‘স্তম্ভিত হওয়ার মতো’ আখ্যা দিয়েছিলেন। ওয়েলিংটন এমনকী ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথাও ভাবছে। নিউজিল্যান্ডে বসবাসরত ১০ হাজার ইহুদির প্রতিনিধিত্বকারী নিউজিল্যান্ড জুইশ কাউন্সিলের কাছে রয়টার্স শনিবারের মিছিল নিয়ে মন্তব্য চাইলেও তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কাছ থেকে সাড়া পায়নি তারা। -রয়টার্স