২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০৭:৫৯

আখেরি চাহার শোম্বা

মাওলানা আবু তালহা তারীফ

আখেরি চাহার শোম্বা

আজ পবিত্র আখেরি চাহার শোম্বা। আখেরি শব্দের অর্থ শেষ, ফারসি ‘চাহার’ শব্দের অর্থ সফর মাস এবং ‘শোম্বা’র অর্থ বুধবার। সুতরাং ‘আখেরি চাহার শোম্বা’র অর্থ সফর মাসের শেষ বুধবার। ইসলামী বিশ্বকোষে উল্লেখ রয়েছে- আখেরি চাহার শোম্বা হলো সফর মাসের শেষ বুধবার। আখেরি চাহার শোম্বা নবীপ্রেমীদের জন্য খুশি ও আনন্দের দিন। কেননা এদিন রসুল (সা.) অসুস্থতা থেকে কিছুটা সুস্থতা অনুভব করেছিলেন। তিনি এত বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন যে নামাজের ইমামতি পর্যন্ত করতে পারেননি। ইসলামী চিন্তাবিদরা বলেন, রসুল (সা.) কিছুটা সুস্থতা লাভ করায় সফর মাসের শেষ বুধবারে গোসল করেছিলেন। সহি বুখারির বর্ণনায় একটি হাদিস উল্লেখ রয়েছে : হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) বলেছেন, ‘রসুল (সা.) আব্বাস (রা.) ও অন্য একজন সাহাবির ওপর ভর করে একদিন ঘর থেকে বের হলেন। নবী যখন আমার ঘরে প্রবেশ করেছিলেন, তখন তাঁর অসুস্থতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। তখন তিনি বললেন, তোমরা আমার ওপর বাঁধন খোলা হয়নি এমন সাত মশক পানি ঢাল, যেন আমি সুস্থ হয়ে লোকদের নির্দেশনা দিতে পারি। এরপর আমরা তাঁকে হজরত হাফসা (রা.)-এর একটি বড় গামলায় বসালাম। তারপর আমরা ওই মশক থেকে তার ওপর ততক্ষণ পর্যন্ত পানি ঢালতে লাগলাম যতক্ষণ না তিনি তাঁর হাত দ্বারা আমাদের ইশারা করে জানালেন যে তোমরা তোমাদের কাজ সম্পন্ন করেছ। এরপর তিনি মসজিদে গিয়ে সাহাবিদের সঙ্গে নামাজ আদায় করেন এবং তাদের খুতবা প্রদান করেন। রসুল (সা.)-এর অসুস্থতা থেকে সুস্থ হওয়ার খবর সাহাবিদের মধ্যে পৌঁছে গেলে তারা খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়েন। খুশিতে জমিনে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন।’ বিভিন্ন সিরাত গ্রন্থের মাধ্যমে জানা যায়, সাহাবিরা একনজর দেখার জন্য রসুল (সা.)-এর দরবারে ছুটে আসেন। আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া জ্ঞাপনসহ শুকরিয়া নামাজ আদায় করেন। উট, দুম্বা, দাসমুক্তিসহ সাধ্যানুযায়ী দানসদকা করেন। রসুলুল্লাহর প্রিয় সাহাবি হজরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ৫ হাজার দিরহাম, ওমর (রা.) ৭ হাজার দিরহাম, ওসমান ১০ হাজার দিরহাম, আলী (রা.) ৩ হাজার দিরহাম এবং আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.) ১০০ উট দান করেন।

এই দিন নবীপ্রেমীদের দিন। আজ তারা আখেরি চাহার শোম্বা উপলক্ষে মসজিদ, মাদরাসা ও দরবারে বিভিন্ন ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে দিবসটি পালন করবে। আমাদেরও উচিত যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালন করা। এদিন দান-সদকা, অন্যকে খাওয়ানো, অতিরিক্ত নফল নামাজ, তওবা, দরুদ পাঠ ও জিকির এবং মিলাদ মাহফিলের ব্যবস্থা করে দোয়া-মোনাজাতে দেশ ও দেশের মানুষের জন্য দোয়া করলে দোষণীয় হবে বলে মনে করি না। হ্যাঁ, অন্যের ক্ষতি কিংবা ধর্মীয় রীতিনীতির বাইরে এমন কিছু করা ঠিক হবে না। আসুন, আখেরি চাহার শোম্বার এই দিনে নিয়ত করি এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করব না, অন্যের ক্ষতি বা পাপ হোক এমন যে-কোনো কর্ম থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করব। অন্তত দিনে একটি ভালো কাজ করার চেষ্টা করব। বিদাতমুক্ত সমাজ ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন গড়ব। আখেরি চাহার শোম্বায় সাহাবিরা যেভাবে নবীজির জন্য ভালোবাসা দেখিয়েছেন আমাদের উচিত নিজেকে নবীজির জন্য সঁপে দেওয়া। সর্বদা নবীজিকে ভালোবাসা। ইমানদার তো ওই ব্যক্তি যে ধনসম্পদ, পরিবার-পরিজনের এমনকি নিজের জীবনের চেয়ে রসুলুল্লাহকে ভালোবাসে। হজরত আনাস (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ ততক্ষণ পরিপূর্ণ ইমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার বাবা-মা, সন্তান-সন্ততি ও সব মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় না হব।’ (বুখারি)

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক


বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর