২৫ নভেম্বর, ২০২৩ ০৭:৫৮

আল্লাহর কৃতজ্ঞতা যেভাবে আদায় করবেন

মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ

আল্লাহর কৃতজ্ঞতা যেভাবে আদায় করবেন

প্রতীকী ছবি

আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা মুমিনের অপরিহার্য দায়িত্ব। কৃতজ্ঞতা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মুমিনের অনন্য এই কল্যাণকর বৈশিষ্ট্যে রাসুলুল্লাহ (সা.) বিস্ময় প্রকাশ করে বলেছিলেন, ঈমানদারের জীবনাচার কত আশ্চর্য ধরনের! তার সব কিছুই কল্যাণকর। এটা শুধু ঈমানদারের ক্ষেত্রেই হতে পারে।

সচ্ছলতায় সে কৃতজ্ঞতা আদায় করে। সেটা তার জন্য কল্যাণকর। আর যদি তার ওপর কোনো বিপদ নেমে আসে, তাহলে সে ধৈর্যধারণ করে। এটাও তার জন্য কল্যাণকর। (মুসলিম, হাদিস : ২৯৯৯)

কৃতজ্ঞতা দুই ধরনের। এক. আল্লাহর কৃতজ্ঞতা। দুই. বান্দার কৃতজ্ঞতা। মহান আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকে প্রতি মুহূর্তে তাঁর সৃষ্টি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে নানাভাবে যে অফুরন্ত নিয়ামত ও সহযোগিতা করে যাচ্ছেন, আজীবন তাঁর কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেও শেষ করা যাবে না।

তাই সর্বাবস্থায় বলতে হবে ‘আল-হামদুলিল্লাহ’ (যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য)।

মহান আল্লাহ তাঁর নবীকে বলেন, ‘(হে নবী!) আপনি বলুন, সকল প্রশংসা আল্লাহর।’ (সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ১১১)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আল্লাহ কোনো বান্দাকে কোনো নিয়ামত দিলে সে যদি ‘আলহামদু লিল্লাহ’ বলে, তাহলে যা সে পেয়েছে, তার চেয়ে উত্তম বস্তু আল্লাহ তাকে দিয়ে থাকেন। (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ৩৮০৫)

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যদি আমার কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করো, তোমাদের আমি আরো বেশি দেব। আর অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর। ’ (সুরা : ইবরাহিম, আয়াত : ৭)

কৃতজ্ঞতা আদায়ের যত পদ্ধতি আছে সব পদ্ধতিতে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে হবে। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, বান্দা অভ্যন্তরীণ বিনয় ও বিনম্রতার মাধ্যমে, প্রশংসা ও স্বীকারোক্তির মাধ্যমে এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তথা আনুগত্য ও ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করবে। (মাদারিজুস সালিকিন : ২/২৪৬) সুতরাং সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রশংসা করা উচিত।

অন্যদিকে সৃষ্টির প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করাও ইসলামের শিক্ষা। কোনো ব্যক্তি যদি কাউকে সামান্য পরিমাণও উপকার করে, তখন তার প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করা জরুরি। এতে একদিকে যেমন ওই ব্যক্তি আরেকজনকে সাহায্য করার ব্যাপারে উৎসাহী হবে; অন্যদিকে যিনি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করলেন, তাঁর প্রতিও ভালোবাসা সৃষ্টি হবে। এ জন্য রাসুল (সা.) বলেন, কারো যদি উপকার করা হয় আর সে যদি উপকারী ব্যক্তিকে ‘জাযাকাল্লাহু খায়রান’ (আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন) বলে, তাহলে সে চূড়ান্ত প্রশংসা করল। (তিরমিজি, হাদিস : ২০৩৫)

কর্মগুণে মানুষ পার্থিব জীবনে প্রশংসিত বা নিন্দিত হয়। ইসলাম মানুষের প্রশংসা বা সমালোচনা উভয় ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষার নির্দেশ দিয়েছে। ইসলাম অনুগ্রহকারীর কৃতজ্ঞতা আদায়ে উৎসাহিত করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে মানুষের কৃতজ্ঞতা আদায় করে না, সে (যথাযথভাবে) আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করতে পারে না। (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ২১৩৩১)

তবে যে ব্যক্তি প্রকাশ্য পাপাচারে লিপ্ত, যে মানুষের ওপর অত্যাচার করে তার প্রশংসা করা নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমরা মুনাফিককে ‘আমাদের নেতা’ বলে সম্বোধন কোরো না। কেননা সে যদি নেতা হয়, তবে তোমরা তোমাদের মহামহিম আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করলে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৭৭)

আর প্রশংসা করার ক্ষেত্রে কোনো অবস্থায়ই বাড়াবাড়ি করা ঠিক হবে না। অতিমাত্রায় প্রশংসা করাকে খোশামোদ বা তোষামোদ বলে, যা পরিত্যাজ্য। তোষামুদে লোকেরা নিজের মতলব হাসিলের জন্য এমন প্রশংসা করে, যা বাস্তবতার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। এটা নির্লজ্জ মিথ্যা ছাড়া আর কিছুই নয়।

প্রশংসার বাড়াবাড়ি সম্পর্কে নিম্নের হাদিস প্রণিধানযোগ্য। হাদিসে এসেছে, আবু মুসা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এক ব্যক্তিকে অন্য এক ব্যক্তির মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা করতে শুনে বলেন, তোমরা তাকে ধ্বংস করে দিলে অথবা ব্যক্তিটির মেরুদণ্ড ভেঙে ফেললে। (বুখারি, হাদিস : ২৬৬৩)

তোষামোদকারীদের সম্পর্কে ইসলামের বিধান হলো মুখে মাটি মেরে দেওয়া। মিকদাদ ইবনুল আসওয়াদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন তোমরা অত্যধিক প্রশংসাকারীদের দেখবে, তখন তাদের মুখে মাটি নিক্ষেপ করবে। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস : ৫৭৭০)

সুতরাং কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ক্ষেত্রে কোনো অবস্থায়ই ইসলামের সীমা লঙ্ঘন করা যাবে না।

বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন

সর্বশেষ খবর