প্রকৃত মুমিন আল্লাহর আনুগত্যে অন্তরে প্রশান্তি অনুভব করে। আল্লাহর সন্তুষ্টির পথে নিজেকে সঁপে দিয়ে তৃপ্তি ও স্বাদ লাভ করে। আর যদি কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়ে যায়, তাহলে সে ব্যথিত হয়। এই স্বাদ প্রকৃত মুমিনই অনুভব করতে পারে, যেমন সুস্থ মানুষ খাবারের স্বাদ অনুভব করে।
হাদিসে বিভিন্ন ইবাদতের স্বাদের কথা বর্ণিত হয়েছে, নিম্নে তা উল্লেখ করা হলো— এক. ইমানের আছে পরম স্বাদ। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে বিদ্যমান, সে ইমানের স্বাদ পায়—(১) যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল অন্য সব কিছু থেকে বেশি প্রিয়। (২) যে একমাত্র আল্লাহর জন্য কোনো বান্দাকে ভালোবাসে। (৩) আল্লাহ কুফর থেকে মুক্তি প্রদানের পর যে ব্যক্তি কুফরিতে প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো অপছন্দ করে। (বুখারি, হাদিস : ২১)
দুই. নামাজের স্বাদ। নামাজে আছে অন্য রকম স্বাদ, যা রাসুল (সা.) অনুভব করতেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, তোমাদের দুনিয়ার মধ্যে আমার কাছে স্ত্রী ও খুশবুকে প্রিয় করা হয়েছে। আর নামাজকে করা হয়েছে আমার চোখের শীতলতা। (নাসাঈ, হাদিস : ৩৯৩৯)
তিন. জ্ঞান অন্বেষণের মজা। পূর্বসূরি মুসলিম মনীষীদের কাছ থেকে ইলম অন্বেষণের অপার্থিব মজার কথা বর্ণিত আছে। ইমাম মুহাম্মাদ (রহ.) গভীর রাত পর্যন্ত ইলম অন্বেষণে ডুবে থাকতেন। আর গভীর রাতে তিনি এ কথা বলে আওয়াজ দিতেন, কোথায় রাজা-বাদশাহদের সন্তান! ইলমের এই স্বাদ থেকে তারা কোথায়! (কাশফুজ জুনুন : ১/৪২ )
চার. শেষ রাতে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় নামাজ আদায় করার স্বাদ। যাকে আল্লাহ রাত জেগে নামাজ আদায় করার তাওফিক দিয়েছেন, সে ভাগ্যবান জানে এর কত মজা।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ এমন মানুষের প্রশংসা করে বলেন, ‘যাদের পার্শ্বদেশ শয্যা থেকে দূরে থাকে তারা তাদের রবকে ডাকে আশঙ্কা ও আশায় এবং আমি তাদের যে রিজিক দান করেছি তা থেকে তারা ব্যয় করে।’ (সুরা : সাজদা, আয়াত : ১৬ )
পাঁচ. কোরআন পাঠের মজা। এই মধুর বাণী যত তিলাওয়াত করা হয় তত পিপাসা বৃদ্ধি পেতে থাকে। উসমান ইবনে আফফান (রা.) বলেন, আমাদের আত্মা যদি পবিত্র হতো তাহলে কোরআন তিলাওয়াত থেকে কখনো পরিতৃপ্ত হতো না। (আল জাওয়াবুল কাফি : ২৬৪ )
যেভাবে ইবাদতের স্বাদ লাভ হবে
১. ইবাদতের জন্য নিজেকে অভ্যস্ত করা এবং এর জন্য সাধনা করা। আল্লাহ বলেন, ‘যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করে, আমি অবশ্যই তাদের আমার পথে পরিচালিত করব...।’ (সুরা : আনকাবুত, আয়াত : ৬৯)
২. অধিক হারে নফল ইবাদত করা। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, ‘আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার প্রিয় পাত্র বানিয়ে নিই...।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৫০২ )
৩. নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করা। কারণ কোরআন তিলাওয়াত অন্তরের মরীচিকা দূর করে।
৪. নীরবে-নিভৃতে আল্লাহকে স্মরণ করা। নবুয়ত লাভের পর রাসুল (সা.)-এর কাছে নির্জনতা পছন্দনীয় হয়ে ওঠে এবং তিনি হেরা গুহায় নির্জনে অবস্থান করতেন। (বুখারি, হাদিস : ৩)
৫. গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। কারণ একমুহূর্তের গুনাহ শত বছরের ইবাদত বিনষ্ট করে দিতে পারে। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, যার দৃষ্টি কোনো স্ত্রীলোকের সৌন্দর্যের প্রতি প্রথমে পতিত হয়, অতঃপর দৃষ্টি সরিয়ে নেয়, আল্লাহ তাআলা এর বিনিময়ে তাকে এমন ইবাদত করার তাওফিক দান করবেন, যার স্বাদ তার অন্তরে উপভোগ করবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২২২৭৮)
আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন।
বিডি প্রতিদিন/কেএ