শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

কাঁটাতারে মিলনমেলা

কাঁটাতারে মিলনমেলা

কাঁটাতারের বেড়ায় গতকাল মিলনমেলা হয় দুই বাংলার কয়েকশ মানুষের। তারা কুশলবিনিময় করেন। কেউ কেউ বিস্কুট, চানাচুর, পানির বোতল ছুড়ে দেন। আবেগময় পরিবেশে স্বজন ও পরিচিতদের দেখে অনেকেই কেঁদে ফেলেন। ঠাকুরগাঁও হরিপুর সীমান্তে গতকাল এই সুযোগ করে দেওয়া হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

কাঁটাতারের বেড়ার এপারে কয়েক হাজার বাংলাদেশি। ওপারে কয়েক হাজার ভারতীয় বাঙালি। তারা পরস্পরের সঙ্গে কথা বলছেন, কুশলবিনিময় করছেন। কেউ কেউ কাঁটাতারের উপর দিয়ে বিস্কুট, চানাচুর ছুড়ে দিচ্ছেন একে অপরকে। কেউ বা আত্মীয়-স্বজনদের দেওয়ার জন্য ঠাণ্ডা পানীয় বোতল ছুড়ে দিচ্ছেন। এমন আবেগঘন পরিবেশে স্বজন ও পরিচিতদের দেখে অনেকেই কেঁদে ফেলছেন। তবে সে কান্না বিরহের নয়, মধুর মিলনের। গতকাল দুপুর ১ টা থেকে সাড়ে ৩টা পর্যন্ত এমন দৃশ্য চোখে পড়েছে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার ভাতুরিয়া সীমান্তে নাগর নদীর পাড়ে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও এখানে বসে দুই বংলার মানুষের মিলনমেলা। সীমান্ত এলাকার অধিবাসীরা জানান, বাংলাদেশ আর ভারতের যেসব সাধারণ মানুষ অর্থাভাবে পাসপোর্ট-ভিসা করতে পারেন না, তারা এ দিনটির অপেক্ষায় থাকেন। এই দিনে তারা আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন। সকাল থেকে দুই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের লোকজন এসে জড়ো হন। দুই দেশের লোকজন একে অপরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ভালোবাসা আর মমতায় দুই দেশের অগণিত মানুষের এ মিলনমেলায় আবেগময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা জানান, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভক্তির পর এদেশের অনেক আত্মীয়-স্বজন ভারতীয় অংশে পড়ে। ফলে অনেকেরই যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। ধর্মপুর গ্রামের পান্না লাল রায় এসেছেন মেয়ে ও জামাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে। শিলিগুড়িতে থাকা মেয়ে রিনা রানীকে ১১ বছর ধরে দেখেন না বাবা পান্না লাল। এবার এত ভিড়ের মধ্যে জামাই-মেয়ের মুখ দেখতে পারেননি তিনি। তাই উপায় না  পেয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলেন তারা। কাঁঠালডাঙ্গী গ্রামের সাদেকুলের ভাই সেরেকুল ইসলামকে  দেখলেন ৫ বছর পর। ইচ্ছা ছিল বুকে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু মাঝখানে যে কাঁটাতারের বেড়া! উষা ও নিরলার ভাই বিশ্বনাথ থাকেন শিলিগুড়িতে। ভাইয়ের জন্য পিঠা এনেছেন। কথা হলেও নিজ হাতের তৈরি পিঠা দিতে পারেননি। তবুও দেখার আনন্দ নিয়ে বিদায় নিলেন তারা। রানীশংকৈল উপজেলার বাচোর থেকে মাধবী রানী এসেছেন ভারতের কাকরমনি গ্রামে থাকা মায়ের সঙ্গে দেখা করতে। মায়ের সঙ্গে দেখা করার অনুভূতি বলতে গিয়ে মাধবী বলেন, বিয়ের পর এই প্রথম মাকে দেখলাম। তবে তেমন কথা হয়নি। অসুস্থ মাকে একনজর দেখে এলাম। এখন একটু ভালো লাগছে। হরিপুর আমগাঁও থেকে আসা ইছাহাক আলী জানান, ২২ বছর পর দুই ভাইয়ের দেখা হলো। দুজনেই জানালেন, ‘পাসপোর্ট ভিসা করিবার পারি নাই। বছরে অন্তত একটা দিন এরকম হইলে ভালো হয়।’ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ির তনজিনা এসেছেন হরিপুরে তার বোন তাসলিমা বেগমের সঙ্গে দেখা করতে। যখন দেখা হলো দুজনের চোখে বেয়ে গড়িয়ে এলো পানি। তারপর ছেলে-মেয়ের বিষয়ে দুজন দুজনার খোঁজখবর নিলেন। দিনাজপুরের দলুয়া থেকে চঞ্চলা রানী এসেছেন মেয়ে-জামাইকে দেখতে। মা বাবাকে দেখতে ঠাকুরগাঁওয়ের ভুল্লী  থেকে এসেছেন চম্পা। দেখা করতে পেরে সবাই খুশি।

সর্বশেষ খবর