কুমিল্লার দেবিদ্বারে শাহিনা আক্তার (৩২) নামে এক গৃহবধূকে তার দুবাই প্রবাসী স্বামী দুই লাখ টাকা দিয়ে চুক্তি করা খুনিদের দিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। হত্যার পর লাশ গভীর নলকূপের ৮০ ফুট গভীর পাইপের ভেতরে ফেলে দেওয়া হয়। হত্যার এক মাস পর হত্যাকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে নিহতের লাশের সন্ধান পেলেও গতকাল পর্যন্ত তা উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। দেবিদ্বার থানার এসআই ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ কামাল আকন্দ জানান, বৃহস্পতিবার বিকালে ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আবদুল করিম নামের একজনকে আটক করার পর তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী গভীর নলকূপের পাইপের ভেতরে লাশের সন্ধান পাওয়া যায়। তবে ৮০ ফুট গভীর থেকে এখনো লাশ উদ্ধার করা যায়নি। নিহতের বড় ভাই শাহ আলম সরকার জানান, 'প্রায় ১২ বছর আগে তার বোন শাহিনার বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের (সুলতানপুর) মোবারক হোসেনের সঙ্গে। তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে আছে। দুই বছর আগে ভগি্নপতি মোবারক ছুটিতে বিদেশ থেকে গ্রামে আসার পর তাদের স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ সৃষ্টি হয়। মোবারক হোসেন ও তার পরিবারের সদস্যরা শাহিনা আক্তারের ওপর নির্যাতন চালায়। প্রায় চার মাস ছুটি শেষে মোবারক হোসেন বিদেশে চলে যাওয়ার পরও মোবারক হোসেনের পরিবার শাহিনাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে আমার বোন তাদের বিরুদ্ধে দেবিদ্বার থানায় নারী নির্যাতন আইনে মামলা করেন। পরবর্তীতে মোবারক হোসেন বিদেশ থেকে মোবাইল ফোনে এবং তার পরিবারের সদস্যরা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য শাহিনার ওপর চাপ সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে তাকে স্বামীর বাড়ি থেকে চলে যেতে বলে। শাহিনা মানুষের বাড়িতে কাজ করে সন্তানদের নিয়ে স্বামীর বাড়িতেই পড়ে থাকে। চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি রাত থেকে শাহিনার কোনো খোঁজ না পাওয়ায় দেবিদ্বার থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহ কামাল আকন্দ জানান, 'গৃহবধূ শাহিনা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে আমরা বিভিন্নভাবে তদন্ত চালাই। বৃহস্পতিবার এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আবদুল করিম নামের এক ব্যক্তিকে ময়নামতি সেনানিবাস এলাকা থেকে আটক করি। রাতে তার জবানবন্দি নিলে আবদুল করিম হত্যায় জড়িত স্বীকার করে বলে, 'শাহিনাকে হত্যা করার জন্য তার স্বামী মোবারক হোসেন তাদের সঙ্গে দুই লাখ টাকায় চুক্তি করে। ওই চুক্তি মোতাবেক করিম ৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টার দিকে আরও দুই সহযোগীসহ শাহিনাকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি ফাঁকা স্থানে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। শাহিনাকে হত্যার পর ঘটনাস্থলের পাশে একটি অব্যবহৃত গভীর নলকূপের (ডিপ টিউবওয়েল) পাইপের ভেতর ফেলে পাইপের মুখ মাটি দিয়ে বন্ধ করে দেয়।'
এসআই কামাল আরও জানান, 'ঘাতক আবদুল করিমের তথ্যানুসারে আমরা বৃহস্পতিবার রাতেই তাকে নিয়ে ঘটনাস্থলে এসে ওই নলকূপের পাইপ শনাক্ত করে হত্যার আলামত পাই। ওই পাইপ উঠানোর জন্য শুক্রবার খননকারীদের না পাওয়ায় লাশ উদ্ধার সম্ভব হয়নি। কুমিল্লার একটি নলকূপ খনন টিমের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে খননকাজ শুরু হবে। বাকি ঘাতকদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, নিহতের দুই ছেলে ইমরান হোসেন (১১), তুষার আহমেদ (৮) ও একমাত্র মেয়ে রোজিনা আক্তার (৫) মায়ের সন্ধান পাওয়া গভীর নকূপের পাইপের গোড়া জড়িয়ে ধরে আহাজারি করছে। শিশু ইমরান হোসেন জানান, 'ওই রাতে সবার খাবার শেষে মা আমাদের নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আমার মাকে দেখিনি।'