শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

শিশু মৃত্যু নিয়ে ক্ষোভ উত্তেজনা, উত্তরায় অবরোধ যানজট

নিজস্ব প্রতিবেদক

শিশু মৃত্যু নিয়ে ক্ষোভ উত্তেজনা, উত্তরায় অবরোধ যানজট

রাজধানীর দক্ষিণখানে পানির ট্যাংকি থেকে উদ্ধার শিশুর লাশ নিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী শিশু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে। এতে উত্তরা এলাকাসহ রাজধানীজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। গতকাল বেলা ১১টা থেকে উত্তরার প্রধান সড়ক অবরোধ করে এলাকাবাসী। পরে তাদের সঙ্গে গার্মেন্ট শ্রমিকরাও যোগ দেয়। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তারা যানবাহন ভাঙচুর শুরু করে। একপর্যায়ে পুলিশ টিয়ারশেল ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে যানবাহন চলাচল শুরু করে। এদিকে, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগের দিন এমন ঘটনায় অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। অবরোধের কারণে সড়কের দুদিকে আটকা পড়েছে শত শত যানবাহন। এতে দুর্ভোগে পড়েন বিদেশগামী যাত্রীসহ সাধারণ মানুষ। অনেকে হেঁটে গন্তব্যে যান। জাহাঙ্গীর নামে এক ব্যক্তি জানান, বেলা ১টার দিকে পুরান ঢাকা থেকে সিএনজি অটোরিকশায় তিনি আবদুল্লাহপুরের উদ্দেশে রওনা দেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে তিনি আবদুল্লাহপুর পৌঁছান। জানা গেছে, দক্ষিণখানের বাসিন্দা আবদুর রশিদের ৮ বছরের ছেলে রিফাতকে খুঁজে পাচ্ছিল না তারা। নিখোঁজের দুদিন পর সোমবার মধ্যরাতে তাদের প্রতিবেশী মুন্সী মার্কেটের অজিত কুমার বসাকের বাড়ির সেফটি ট্যাঙ্কে রিফাতের লাশ পাওয়া যায়। এরপর রিফাতের বাবা দক্ষিণখান থানায় অজিত কুমারের বিরুদ্ধে মামলা করতে যান। কিন্তু থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহা উপযুক্ত প্রমাণ না থাকার কারণ দেখিয়ে তার মামলা নেননি। ওসির সঙ্গে অপরাধীর যোগসাজশ রয়েছে এই সন্দেহে এলাকাবাসীকে নিয়ে রিফাতের বাবা মঙ্গলবার বিক্ষোভ করেন। পরে ওসি ঘটনা বেগতিক দেখে রাতেই ওই বাড়িওয়ালা অজিত এবং তার স্ত্রীকে আসামি করে একটি মামলা নেন। পরিবার ও এলাকাবাসীর দাবি, রিফাত তার বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে ঘুড়ি উড়াতে পাশের বাড়িতে যায়। বিরক্ত হয়ে অজিত কুমার বসাকের লাঠির আঘাতে রিফাতের মৃত্যু হয়। ঘটনা ধমাচাপা দিতে বাড়িওয়ালা বাড়ির পানির ট্যাঙ্কিতে রিফাতের লাশ ফেলে দেয়। পরে পুলিশ ও স্থানীয়দের সহায়তায় শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হত্যার প্রতিবাদে এবং দোষী ব্যক্তির শাস্তির দাবিতে গতকাল উত্তরার রাজলক্ষ্মীতে লাশ নিয়ে তারা সড়কে বিক্ষোভ করেন। দক্ষিণখান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুল গনি জানান, অনেক খোঁজাখুঁজির পর সোমবার রাতে রিফাতের লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় অজিত কুমার বসাক ও তার স্ত্রী রেখা রানী বসাককে আসামি করে মঙ্গলবার রাতে একটি মামলা হয়। গতকাল দুপুরে রিফাতের লাশের ময়নাতদন্ত শেষে দক্ষিণখানে নিয়ে যাওয়ার সময় রাজলক্ষ্মী মার্কেটের সামনে স্থানীয়রা বিক্ষোভ করেন। তিনি জানান, আমরা নিহত শিশুর পরিবারের সঙ্গে ঘটনার পর থেকেই যোগাযোগ রাখছি। তাদের আইনি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। মামলা নেওয়া হয়েছে। তবে ঘটনার পর থেকে আসামিরা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। গতকাল আসামিদের গ্রেফতার দাবিতে এলাকাবাসী সড়ক অবরোধ করে। আমরা আশ্বাস দেওয়ার পর শিশুটির স্বজন ও পরিবার তার লাশ নিয়ে চলে যায়। পরে শিশু রিফাতের লাশ দাফন করা হয়েছে। শিশু রিফাতের স্বজন শাহীন ইসলাম কুদরত জানান, রিফাত বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে গেলে অভিযুক্ত অজিত কুমার তাদের মারধর করে। এ সময় রিফাত মারা গেলে তার মরদেহ পানির টাঙ্কিতে ফেলে দেয়। আমরা থানায় মামলা করতে গেলে দক্ষিণখান থানার ওসি মামলা নেননি। পরে আমরা বিক্ষোভ করলে মামলা নেয়। প্রথমে অভিযুক্তকে আটক করা হলেও পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আমরা আসামিদের গ্রেফতার এবং ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। এ বিষয়ে পুলিশের উত্তরা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) নাবিদ কামাল শৈবাল জানান, শিশু রিফাতের মৃত্যু নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর