মঙ্গলবার, ৬ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

জিআরপি থানার ভিতরে গণধর্ষণ তদন্তে কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

খুলনার জিআরপি (রেলওয়ে) থানায় তিন সন্তানের জননীকে (৩৫) গণধর্ষণের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার ফিরোজ আহমেদকে। বাকি দুই সদস্য হলেন কুষ্টিয়া রেলওয়ে সার্কেলের ডিআইও-১ পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) শ. ম. কামাল হোসেইন ও দর্শনা রেলওয়ে ইমিগ্রেশন ক্যাম্পের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. বাহারুল ইসলাম। তদন্ত কমিটিকে ঘটনাটি সরেজমিন অনুসন্ধান করে সুস্পষ্ট মতামতসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন ৭ দিনের মধ্যে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল দুপুরে পাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের নির্দেশে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

এদিকে, ধর্ষণের শিকার ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা গতকাল দুপুরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষা শেষে ওই নারীকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

ঈাকশী রেলওয়ে জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে বলা হয়, ‘ষুলনা রেলওয়ে থানা হাজতে রেখে ৬/৭ জন পুলিশ তাকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ ও মারপিট করে মর্মে খুলনার অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দরখাস্ত করেন। আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করে এবং তাকে ডাক্তারি পরীক্ষা করানোর জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে তাকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনার সঠিক তথ্য উদঘাটনের লক্ষ্যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. অঞ্জন কুমার চক্রবর্তী জানান, ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের গাইনি চিকিৎসকরা পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন। তার বিভিন্ন আলামত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না।

ভুক্তভোগীর বড় বোন অভিযোগ করে বলেন, তার বোন অসুস্থ থাকায় বৃহস্পতিবার যশোরে ডাক্তার দেখাতে যায়। শুক্রবার ট্রেনযোগে খুলনায় ফেরার পথে ফুলতলা এলাকায় জিআরপি পুলিশ প্রথমে তাকে মোবাইল চুরির অভিযোগে থানায় নিয়ে যায়। গভীর রাতে জিআরপি পুলিশের ওসি ওসমান গনি পাঠানসহ ৫ পুলিশ সদস্য থানার মধ্যে তাকে ধর্ষণসহ মারধর করে। তাকে দীর্ঘক্ষণ বিবস্ত্র অবস্থায় হাজতে রাখা হয়। পরদিন শনিবার ৫ বোতল ফেনসিডিলসহ মাদক মামলা দিয়ে আদালতে সোপর্দ করে রেল পুলিশ। আদালতে তার জামিন শুনানিকালে জিআরপি থানায় পুলিশের গণধর্ষণের বিষয়টি আদালতের সামনে তুলে ধরে তার বোন। এরপর আদালত তার ডাক্তারি পরীক্ষার নির্দেশ দেয়।

নির্যাতনের শিকার ওই নারীর বড় ভাই (মো. সেলিম) বলেন, বোনের গ্রেফতারের খবর পেয়ে জিআরপি থানায় গেলে ওসি ওসমান গনি পাঠান দেড় লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে বলেন, দেড় লাখ টাকা দিলে বোনকে ছেড়ে দেবেন। তিনি বলেন, পরের দিন ভোরে থানায় গিয়ে দেখি বোনের চেহারা বিধ্বস্ত। বোন ঠিকমতো দাঁড়াতেও পারছিল না। আরেক নিকটাত্মীয় জানান, ধর্ষণের পর তাকে বেধড়ক মারপিটও করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২ আগস্ট ঘটনার রাতে খুলনা রেলওয়ে জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমান গনি পাঠান, এসআই গৌতম কুমার পাল, এসআই নাজমুল হাসান, কনস্টেবল মিজান, হারুন, মফিজ, আবদুল কুদ্দুস, আলাউদ্দিন, কাজলসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে ওসি ওসমান গনি পাঠান ও এসআই গৌতমসহ ৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও মারপিটের অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ওই নারী।

অভিযোগ অস্বীকার করে জিআরপি থানার ওসি ওসমান গনি পাঠান বলেন, গ্রেফতারকৃত নারী একজন মাদক ব্যবসায়ী। সে মাদক মামলা থেকে বাঁচতে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগ করেছে।

সর্বশেষ খবর