পুলিশ হেফাজতে আলমগীর হোসেন (৩৮) নামে এক যুবকের মৃত্যুর অভিযোগে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)সহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি-উত্তর) উপ-কমিশনারকে (ডিসি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশ এ আদেশ দেন। এর আগে বুধবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে মামলা করেন ওই যুবকের স্ত্রী মোছা. আলো বেগম। মামলার আসামিরা হলেন- থানার ওসি তপন চন্দ্র সাহা, এসআই মিজানুর রহমান, এএসআই নামজুল ও কনস্টেবল সোহাগ।
মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, আলমগীর পেশায় একজন প্রাইভেট কারচালক। তার গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধা সদরের কালিবাড়ি এলাকায়। তিনি উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরের ফুলবাড়িয়া বাজার এলাকায় স্ত্রী ও দুই মেয়ে নিয়ে থাকতেন। বায়িং হাউজের চালকের চাকরির পাশাপাশি গেঞ্জি, টি-শার্ট ও প্যান্ট বিক্রি করতেন। গত ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় শান্ত নামে একজন আলমগীরকে মোবাইলফোনে উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে নিয়ে যায়। সেখানে এসআই মিজানসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য এবং শান্ত উপস্থিত ছিলেন। ওই স্থানটিতে গেঞ্জি, টি-শার্ট ও প্যান্ট বিক্রি করতেন আলমগীর। যাওয়ার পর এসআই মিজান তার প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে বলে, তোর কাছে ইয়াবা আছে। পরে হাত বের করে একটি প্যাকেট দেখিয়ে বলে- ‘এই যে ইয়াবা পাওয়া গেছে।’ এরপর পুলিশ মালামালসহ আলমগীরের ভ্যান আটক করে গাড়িতে উঠায়। পুলিশ হেফাজতে থাকাবস্থায় আলমগীর তার স্ত্রীর মোবাইলফোনে কাঁদতে কাঁদতে ভ্যানচালক লালুর মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা পাঠাতে বলেন। টাকা দিলে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেবে। পরে আলো বেগম ৫ হাজার টাকা পাঠিয়ে দেন। এর পরেও পুলিশ আলমগীরকে থানায় নিয়ে তার ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালায়।
পরদিন সকালে আলো বেগম উত্তরা পশ্চিম থানায় যান এবং থানার দোতলায় গিয়ে স্বামীকে উসকো খুসকো অবস্থায় দেখতে পান। সেখানে আলমগীর তার স্ত্রীকে বলেন, মিথ্যাভাবে তাকে ধরে এনে ৫ লাখ টাকার জন্য নিষ্ঠুর ও অমানবিক নির্যাতন করে পঙ্গু করে দিয়েছে। গত ১৭ ডিসেম্বর আদালতের মাধ্যমে আলমগীরকে কারাগারে পাঠানো হয়। ১৯ ডিসেম্বর আলো ও আলমগীরের বড় ভাই কেরানীগঞ্জ কারাগারে তাকে দেখতে গেলে কারাগার থেকে জানানো হয়, আলমগীরকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হবে। ওইদিন তাকে ঢাকা মেডিকেলে বেলা সোয়া ৩টার দিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। ২০ ডিসেম্বর সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি হয়। সেখানে নিহতের নিতম্বে ৫ ইঞ্চি কালো দাগ, পিঠে, হাতে ও পায়ে লালচে দাগ রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।