ভাস্কর্য নিয়ে রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য দেওয়া হেফাজতে ইসলামের নেতা জুনাইদ বাবুনগরী, মামুনুল হক ও সৈয়দ ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে পৃথক দুই রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছে। গতকাল দুই মামলার বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ঢাকা মহানগর হাকিম সত্যব্রত শিকদার অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে ৭ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। মামলা দুটির মধ্যে একটি মামলা করেছেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। দন্ডবিধির ১২০(খ)(১)/১২৪(ক)/৫০৫(ক) ধারায় করা এ মামলায় হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী, খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মামুনুল হক এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করিমকে আসামি করা হয়েছে। দ্বিতীয় মামলাটি করেছেন বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট মশিউর মালেক। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে কেবল মামুনুল হককে, যিনি হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটিতে যুগ্ম-মহাসচিবের দায়িত্বে আছেন। বুলবুলের মামলার আরজিতে অভিযোগ করা হয়েছে, ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসামিরা ধর্মের আজগুবি ব্যাখ্যা দিয়ে বিদ্বেষপূর্ণ, কাল্পনিক, উত্তেজনাকর ও উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। তারা বাঙালি মুসলমান-সমাজের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু ও সংবিধান সম্পর্কে বিদ্বেষ সৃষ্টি করে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে রাষ্ট্রদ্রোহমূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত রয়েছেন।
আর মশিউর মালেকের মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, মামুনুল হক এক আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার হুমকি দেন, যা দেশ ও সরকারের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।
এর আগে ১৩ নভেম্বর ঢাকার গেন্ডারিয়ার ধূপখোলার মাঠে ‘তৌহিদী জনতা ঐক্য পরিষদের’ ব্যানারে এক সমাবেশ থেকে মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করা হয়। একই দিন রাজধানীর বিএমএ অডিটরিয়ামে বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিস ঢাকা মহানগরীর উদ্যোগে শানে রিসালাত কনফারেন্সে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মামুনুল হক প্রকাশ্যে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা করেন। এরপর ২৭ নভেম্বর চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে এক মাহফিলে অংশ নিয়ে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী হুমকি দেন, যে কোনো দল ভাস্কর্য বসালে তা টেনে-হিঁচড়ে ফেলে দেওয়া হবে। তাদের এ ধরনের বক্তব্যের প্রতিবাদে দেশজুড়ে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যেই শুক্রবার গভীর রাতে কুষ্টিয়া শহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি নির্মাণাধীন ভাস্কর্যে ভাঙচুর চালানো হয়।