শিরোনাম
রবিবার, ২৮ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

৪৮ ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয় দুই কিলারকে

মির্জা মেহেদী তমাল

৪৮ ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয় দুই কিলারকে

২০১২ সালের ২৫ অক্টোবর নিখোঁজ হন জমি ব্যবসায়ী সাঈদ। সাত দিন পর ২০১২ সালের ১ নভেম্বর ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার শাক্তা ইউনিয়নের ব্রাহ্মণসুর এলাকা থেকে সাঈদের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। গলায় একটি দড়ি  প্যাঁচানো অবস্থায় ছিল। পুলিশ নিশ্চিত যে, শ্বাসরোধ করে সাঈদকে হত্যা করা হয়।

সাঈদের পরিবারের সদস্যরা পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন বিভাগে ধরনা দিচ্ছে। আশার বাণী নেই কোথাও। সাঈদের দুই ভায়রা মিজান ও আবুল এ সময় সাঈদের পরিবারকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন। তারা ছোটাছুটি করছেন সাঈদের খোঁজে।

সাঈদের নিখোঁজ হওয়ার পেছনে দায়ী কারা? কেনই বা তাকে তুলে নেওয়া হবে? কার লাভ এতে? এ নিয়ে চলছে পুলিশের ভিতর তোলপাড়। সাঈদের অফিসের পিয়নকে জেরা করে পুলিশ। পিয়ন জানায়, ‘স্যার তো কেরানীগঞ্জে গেছিল জমি দেখতে। একাই গেছিল সেদিন।’ সাঈদের সঙ্গে কোনো ঝামেলা আছে কারও? প্রশ্ন পুলিশের। পিয়ন বলে, ‘জমির ব্যবসা করায় প্রায়ই ঝামেলা হতো। কয়েক দিন আগেও কয়েকজন চাঁদা দাবি করেছেন। তারা ভারতে আত্মগোপনে থাকা দেশের এক শীর্ষ সন্ত্রাসীর নামে চাঁদা তুলতে এসেছিলেন। কিন্তু সাঈদ স্যার তাদের বকাঝকা দিয়ে বিদায় করে দেন। যাওয়ার আগে সন্ত্রাসীরা হত্যার হুমকি দিয়ে যায়।’ পুলিশ এমন তথ্য পাওয়ার পর তদন্তে গতি বাড়িয়ে দেয়।

পুলিশ পুরান ঢাকায় অভিযান চালায়। সেখান থেকে গ্রেফতার করা হয় দুজন পেশাদার কিলারকে। থানায় নিয়ে চলে জেরা। কিন্তু তারা মুখ খোলে না। নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও তাদের কাছ থেকে কিছুই মেলে না। পুলিশ বলে, হুমকি দিয়েই তো তোরা খুন করেছিস। এবার বল, কেন করেছিস। জবাবে এক কিলার বলে, ‘চান্দার জন্য হুমকি দিছি স্যার। কিন্তু আমরা খুন করিনি। আর সাঈদরে খুন করা হয়েছে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে। আমরা এমনভাবে খুন করি না। আমাগো বস কইসে, ঠুস কইরা মারতে। মানে গুলি কইরা। আমরা গলা টিপে মানুষ মারি না। তবে অস্ত্র ব্যবসায়ী সাবুরে জিগাইলে কিছু পাইবেন।’ পুলিশের অভিযান এবার সেই অস্ত্র ব্যবসায়ীর আস্তানায়।

পুলিশ প্রথমে পুরান ঢাকাতেই এক যুবককে পাঠায় সেই অস্ত্র ব্যবসায়ীর কাছে। যুবকটি অস্ত্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে একটি রিভলবার ভাড়া নেয় ২০ হাজার টাকায়। ঠিক ওই সময়ে পুলিশ হাজির। ২৫ তারিখে তুই কাকে অস্ত্র ভাড়া দিয়েছিস। পুলিশের এমন প্রশ্নে নাম বলে দেয় সে। এবার পুলিশের অভিযান অস্ত্র ভাড়া করে নিয়ে যাওয়া যুবকটির উদ্দেশ্যে। তিন দিন খোঁজ করে মিলল সেই অস্ত্র ব্যবসায়ীকে। সে জানায়, ‘অস্ত্রটি সে এনে দিয়েছে দুই কিলারকে। কিন্তু কার জন্য সেটা জানি না।’ পুলিশের এমন একের পর এক অভিযানে পেরিয়ে গেছে আরও ১৫ দিন। কিন্তু খুনের মাস্টারমাইন্ড কে, তা এখনো স্পষ্ট নয় পুলিশ। কিন্তু চেষ্টা চালাচ্ছে তা জানার জন্য। পুলিশ এবার অভিযান চালায় কেরানীগঞ্জে। রাতের আঁধারে পেশাদার কিলারদের আস্তানায় জীবন বাজি রেখে হানা দেয় পুলিশের একটি দল। ধরা পড়ে দুই কিলার। তাদের নিয়ে যাওয়া হয় থানায়। চলে জেরা। মুখ খোলে না। নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়। টানা ৪৮ ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয় এই দুই কিলারকে। এক পর্যায়ে তারা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। পড়ে যেতে চায়। কিন্তু খোঁচা দিয়ে আবারও দাঁড় করিয়ে রাখেন পুলিশ সদস্যরা। কিন্তু আর কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যায়। তাদের মুখ খুলতেই হয়। সেই পেশাদার কিলার যাদের নাম ফাঁস করেন, তাদের নাম শুনে পুলিশ যেন আকাশ থেকে পড়ে। তারা হতবাক। এও কি সম্ভব। দুই ভায়রা ভাই মিজান আর আবুলের পরিকল্পনায় সাঈদকে খুন! এরা দুজন আসামি ধরতে পুলিশের সঙ্গে বিভিন্ন অভিযানেও ছিলেন। পুলিশ আর দেরি করে না। ছুটে যায় সাঈদের বাসায়। সেখানেই ছিল সাঈদের দুই ভায়রা। তাদের থানায় নিয়ে যাওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু তারা উল্টো পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলে শাসায়। তখন সেই দুই কিলারকে তাদের মুখোমুখি করে পুলিশ। তখন আর অস্বীকার করতে পারেনি দুই ভায়রা। স্বীকার করে নেয়, তারা এই কন্ট্রাক্ট কিলিংয়ে জড়িত। দুই ভায়রা পুলিশের কাছে বলে, সাঈদ ধনী ব্যবসায়ী। কিন্তু তারা ধনী নয়। যদিও মাঝেমধ্যে সাঈদ তাদের মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন। কিন্তু সব সময় দিতেন না। এ কারণে সাঈদের সম্পদ আত্মসাতের চেষ্টা করতে খুনের পরিকল্পনা আঁটি। আর এ জন্য কেরানীগঞ্জের দুই কিলারকে দেড় লাখ টাকায় ভাড়া করা হয়। পরিকল্পনা মতো জমি দেখানোর কথা বলে সাঈদকে কেরানীগঞ্জে নেওয়া হয়, সেখানেই তাকে গলা টিপে হত্যার পর লাশ ফেলে রাখা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর