শনিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

কমছে টেস্ট বাড়ছে ভোগান্তি

নমুনা টেস্ট কমে যাওয়ায় শনাক্ত কমেছে

জয়শ্রী ভাদুড়ী

কমছে টেস্ট বাড়ছে ভোগান্তি

কয়েক দিন জ্বরে ভোগা আছিয়া বেগমের গতকাল থেকে শ্বাসকষ্ট। মুন্সীগঞ্জ থেকে তাকে মেয়েজামাই এনেছেন ঢাকা মেডিকেলে -জয়ীতা রায়

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ছাড়িয়ে গেছে দেশে শনাক্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড। এ মাসে ল্যাবগুলোয় টেস্ট বাড়ানোয় বাড়তে থাকে শনাক্তের সংখ্যা। হঠাৎই তিন দিন ধরে কমেছে নমুনা পরীক্ষা। টেস্ট করানোর জন্য করোনা উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালের দরজায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকছে মানুষ। ভোগান্তিতে টেস্ট করাতে দেরি হওয়ায় শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটছে।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্যসূত্রে জানা যায়, গতকাল দেশের ২৫৭টি পরীক্ষাগারে ১৮ হাজার ৯০৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে শনাক্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৪১৭ জন। শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ। মারা গেছেন ১০১ জন। নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৮ হাজার ৭০৭টি। ১৫ এপ্রিল নমুনা সংগ্রহ করা হয় ১৮ হাজার ৭৭০টি। নমুনা টেস্ট করা হয় ১৯ হাজার ৯৫৯টি। করোনা শনাক্ত হয়েছে ৪ হাজার ১৯২ জনের। শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। মারা গেছেন ৯৪ জন। ১৪ এপ্রিল নমুনা সংগ্রহ করা হয় ২৪ হাজার ৯৯৫টি। নমুনা টেস্ট হয়েছে ২৪ হাজার ৮২৫টি। করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫ হাজার ১৮৫ জনের। শনাক্ত হার ২০ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এ তিন দিনে নমুনা কম পরীক্ষা হওয়ায় শনাক্তও কম হয়েছে। ১২ এপ্রিল নমুনা সংগ্রহ করা হয় ৩৬ হাজার, নমুনা টেস্ট করা হয় ৩৪ হাজার ৯৬৮টি। করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭ হাজার ২০১ জনের। মারা গেছেন ৮৩ জন। শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৫৯ শতাংশ। এ চার দিনে নমুনা পরীক্ষা কমেছে ১৬ হাজার ৬২টি।

নমুনা পরীক্ষা কমলেও কমেনি উপসর্গ নিয়ে টেস্ট করতে আসা মানুষের ভিড়। হাসপাতালের বাইরে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন শত শত মানুষ। তার অধিকাংশের রয়েছে জ্বর, কাশি, গলাব্যথাসহ বিভিন্ন করোনা উপসর্গ। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে নমুনা দিতে না পেরে ফিরে গেছেন অনেকে। শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করিডোরে নমুনা টেস্ট করতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন প্রায় ৩০০ জন। নমুনা নেওয়া হয়েছে ১৮০ জনের। বাকিরা দীর্ঘ অপেক্ষার পরে ফিরে গেছেন। লাইনে দাঁড়িয়ে নমুনা দিতে না পারায় বাবাকে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছিলেন ইবরাহিম আলীর ছেলে সোহরাব আলী। সোহরাব আলী বলেন, ‘চার দিন ধরে বাবার জ্বর ও গলাব্যথা। করোনা কি না জানতে সকালে মোটরসাইকেলে করে হাসপাতালে এসেছিলাম টেস্ট করাতে। সকাল ৯টা থেকে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলাম। কিন্তু বুথ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলাম না। তার আগেই তারা নমুনা সংগ্রহ বন্ধ করে দিয়েছেন। এভাবে দীর্ঘ সময় রোদে গরমে বাবার শরীর আরও খারাপ হয়ে গেছে। বয়স্ক মানুষ এজন্য দ্রুত টেস্ট করাতে চাইছিলাম। কিন্তু টেস্টই যদি করাতে না পারি তাহলে চিকিৎসার কী হবে?’

একই অবস্থা মুগদা জেনারেল হাসপাতালের বাইরের গেটেও। শত শত মানুষ দাঁড়িয়ে আছে নমুনা দেওয়ার জন্য। তাদের সবারই করোনার উপসর্গ আছে। কিন্তু মুগদা হাসপাতালে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৬৬ জনের। বাকিরা উপসর্গ নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। রামপুরা থেকে মুগদা হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষা করাতে গিয়েছিলেন তামজিদ খন্দকার। তিনি বলেন, ‘লকডাউনের মধ্যে রিকশায়, হেঁটে অনেক কষ্ট করে এখানে নমুনা দিতে এসেছিলাম। সকাল ১০টা থেকে রোদের মধ্যে শরীরে জ্বর নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। এমনিতেই অসুস্থ এখন মনে হচ্ছে আর বাসায় ফিরে যেতে পারব না। নমুনা জমা দিতে পারলে তাও একটা বিষয় ছিল। এত কষ্ট করে এসে টেস্ট করাতে পারলাম না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাড়িতে বয়স্ক বাবা-মা থাকায় জ্বর আসার পর থেকে আইসোলেশনে আছি।’ তিনি বলেন, ‘করোনা নিয়ে মানুষের মনে এমনিতেই নানা ভয় কাজ করছে। এবার শুনছি আক্রান্তের চার-পাঁচ দিনে শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে যে কোনো খারাপ কিছু হতে পারে। টেস্টও হলো না, করোনা কি না তাও বুঝতে পারছি না।’ এ ব্যাপারে কভিড-১৯বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ কমাতে প্রথম করণীয় নমুনা টেস্ট বাড়ানো। এটা আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি। টেস্টের পরিমাণ বাড়িয়ে সংক্রমিতদের আলাদা করতে হবে। এরপর তাদের সংস্পর্শে যারা গেছেন তাদের চিহ্নিত করে নমুনা পরীক্ষা করতে হবে। এভাবে ধাপে ধাপে রোগী শনাক্ত করতে পারলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। উপসর্গ আছে এমন রোগী যদি নমুনা দিতে গিয়ে ফিরে আসেন সেটা খুবই দুঃখজনক। টেস্ট না বাড়ালে সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়বে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর