সোমবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

অস্ট্রেলিয়ায় বসে প্রতারণা ঝালকাঠির রোজীর

নিজস্ব প্রতিবেদক

অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী উম্মে ফাতেমা রোজীর গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠি। মাঝে-মধ্যে দেশে এসে টার্গেট করে কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলেন। সেই সম্পর্কের জেরে বাংলাদেশিদের কম খরচে পরিবারসহ অস্ট্রেলিয়ায় নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখান তিনি। তারপর ভুয়া ভিসা ও জাল কাগজপত্র তৈরি করে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন রোজী।

অস্ট্রেলিয়ায় বসে সবকিছুর কলকাঠি  নাড়লেও দেশে রোজীর একটি প্রতারক চক্র রয়েছে। যারা রোজীর কথামতো তাকে টাকা-পয়সা সংগ্রহসহ যাবতীয় সহযোগিতা করে থাকে। এ পর্যন্ত সাতজন ভুক্তভোগী পাওয়া গেছে যারা রোজীকে টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন। তেমনি একজন ভুক্তভোগী সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট এম এ বি এম খায়রুল ইসলাম। তিনি সপরিবারে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার জন্য রোজীর কাছে ৭৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা দিয়ে প্রতারণার শিকার হন। প্রতারিত হওয়ার পর তিনি অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী রোজীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার তদন্তে গিয়ে রোজীর সহযোগী চক্রের দুজনকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি। তারা হলেন- মো. সাইমুন ইসলাম ও আশফাকুজ্জামান খন্দকার। তাদের কাছ থেকে জাল ভিসা প্রস্তুত কাজে ব্যবহৃত একটি কম্পিউটার, অস্ট্রেলিয়ার জাল ভিসা গ্র্যান্ট নোটিস সাতটি, ফ্রি চিকিৎসার হেলথ মেডিকেয়ার কার্ড ৫টি ও অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার বিমানের টিকিট ৬টি জব্দ করা হয়। তবে চক্রের মূল হোতা রোজী এখনো অস্ট্রেলিয়ায়। দেশে ফিরিয়ে এনে রোজীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ইমাম হোসেন। গতকাল দুপুরে রাজধানীর মালিবাগে সিআইডি সদর দফতরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অস্ট্রেলিয়ান রিলেটিভ স্পন্সর মাইগ্রেশন সাবক্লাস (৮৫৫) পারমান্যান্ট রেডিডেন্স জাল ভিসা প্রস্তুত করে বাংলাদেশি নিরীহ লোকদের অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর কথা বলে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রবাসী উম্মে ফাতেমা রোজী। তিনি মাঝে-মধ্যে দেশে এসে প্রতারণার ফাঁদ পাততেন। দেশে এসে উচ্চবিত্তদের টার্গেট করে আত্মীয়ের ভিসায় অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাবেন বলে প্রলোভন দেখান। সপরিবারে গেলে (স্বামী-স্ত্রী) ২৩ লাখ আর একা গেলে ১৮ লাখ বলে অফার দিতেন। রোজী অস্ট্রেলিয়ায় ইমিগ্রেশন কনস্যুলার জেনারেল হিসেবে মিথ্যা পরিচয় দেন। এ ছাড়াও তিনি অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কৃত হন ও পুরস্কারের ছবি ভুক্তভোগীদের দেখান। এতে ভুক্তভোগীরা বিশ্বাস করতে থাকেন। এরপর অস্ট্রেলিয়ার ইমিগ্রেশনমন্ত্রীর সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে বলেও জানান। পরে ধাপে ধাপে কাগজপত্র ও ভিসার কথা বলে টাকা নিতে থাকেন।

সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, এমন ফাঁদে পড়ে স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের ৮ সদস্যসহ অস্ট্রেলিয়ায় যেতে চেয়েছিলেন সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট এম এ বি এম খায়রুল ইসলাম। এ জন্য দুটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৭৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা রোজীর অ্যাকাউন্টে দেন। এরপর কাগজপত্র ও ভিসা হাতে পেয়ে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখতে পান সবই ভুয়া এবং জাল। এভাবে প্রতারণা করে রোজী একাধিক মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। আমরা আশা করছি রোজীকে দ্রুতই দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব। এরপর জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও বিস্তারিত তার কাছ থেকে জানা যাবে।

সর্বশেষ খবর