বৃহস্পতিবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

গ্রাহককে না জানিয়ে ক্রেডিট কার্ডে অতিরিক্ত ইন্টারেস্ট

উপেক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা

আলী রিয়াজ

ব্যক্তিগত ঋণের ক্রেডিট কার্ডের অনিয়ম বন্ধ করা যাচ্ছে না। গ্রাহকের কাছে সুদবিহীন, চার্জবিহীন বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও কৌশলে নানা ধরনের সুদ ও চার্জ আরোপ করছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনাও উপেক্ষিত থাকছে। ইন্টারেস্ট হিসাবের মারপ্যাঁচে ফেলে গ্রাহকদের কাছ থেকে বেশি ইন্টারেস্ট আদায় করে যাচ্ছে বেশির ভাগ ব্যাংক। নির্দিষ্ট সময়ের আগে সুদ আরোপ করার কোনো নিয়ম না থাকলেও বিভিন্ন ব্যাংক সেই কাজটিই করছে। অনেকটা গ্রাহককে না জানিয়েই গোপন সুদ আদায় করছে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলারে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে, ক্রেডিট কার্ডে বিল পরিশোধের নির্ধারিত সর্বশেষ তারিখের অব্যবহিত পরের দিন থেকে ক্রেডিট কার্ডের অপরিশোধিত বিলের ওপর ইন্টারেস্ট বা সুদ আরোপযোগ্য হবে। এ ক্ষেত্রে কোনোভাবেই লেনদেনের তারিখ থেকে ইন্টারেস্ট আরোপ করা যাবে না। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যাংকই এ নির্দেশনা উপেক্ষা করে গ্রাহকদের লেনদেনের তারিখ থেকে ইন্টারেস্ট আরোপ করছে। এভাবে গ্রাহকদের ইন্টারেস্ট হিসাবের পদ্ধতি সম্পর্কে অন্ধকারে রেখে তাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অতিরিক্ত ইন্টারেস্ট আদায় করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কোনো গ্রাহক যদি আগস্ট মাসের ৩০ তারিখে ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ৮ হাজার টাকা খরচ করেন, তার মাসের নির্ধারিত পেমেন্ট তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বরের আগেই তিনি ৪ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা বিআরপিডি সার্কুলার লেটার নম্বর-৪৭, ৩(খ) তারিখ ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ এবং পিএসডি সার্কুলার লেটার নম্বর-১২, ১(ক) তারিখ ২৫ আগস্ট ২০২১ অনুযায়ী ওই গ্রাহকের অপরিশোধিত ৪ হাজার টাকার ওপর ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ইন্টারেস্ট চার্জ করার কথা। কিন্তু ব্যাংকগুলো ওই গ্রাহকের অপরিশোধিত ৪ হাজার টাকার ওপর লেনদেনের তারিখ ৩০ আগস্ট থেকেই ইন্টারেস্ট চার্জ করছে। এর ফলে গ্রাহকরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। সময়সীমা নির্ধারিত থাকলেও বিল পরিশোধের  সময় গ্রাহককে বলা হয় না তার ঋণের ওপর মোট সুদের পরিমাণ। কোন তারিখ থেকে সুদ আরোপ করা হয়েছে সেটি উল্লেখ থাকে না। অনেক ক্ষেত্রে গ্রাহকের বিলের ওপর সুদ হয়তো ৫০০ টাকা বা ২০০ টাকা। এই পরিমাণ অর্থের জন্য গ্রাহকও খোঁজ নেন না কোন তারিখ থেকে সুদ আরোপ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কোনোভাবেই লেনদেনের তারিখ থেকে ইন্টারেস্ট আরোপ করা যাবে না। গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা করতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ নির্দেশনা দেয়। কিন্তু এখানে স্পষ্ট প্রতীয়মান যে, ইন্টারেস্ট হিসাবের মারপ্যাঁচে ফেলে গ্রাহকদের কাছ থেকে বেশি ইন্টারেস্ট আদায় করে যাচ্ছে বেশির ভাগ ব্যাংক। ইন্টারেস্ট হিসাবের পদ্ধতিতে যতটা স্বচ্ছতা বজায় রাখা দরকার তা করা হচ্ছে না। পদ্ধতিটি জটিল হওয়ায় তা গ্রাহকের কাছে দুর্বোধ্য মনে হচ্ছে এবং এটি তাদের নজরে আসছে না। বিভিন্ন ব্যাংকের গ্রাহকরা বিচ্ছিন্নভাবে অভিযোগটি তুলেছেন। কিন্তু সম্মিলিতভাবে উপস্থাপন না করায় অভিযোগটি জোরালো হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকেও এ রকম অভিযোগ করেছেন একাধিক গ্রাহক। গ্রাহকরা বলছেন, ব্যাংকিং খাতের নীতিনির্ধারক ও অভিভাবক হিসেবে গ্রাহকস্বার্থ রক্ষায় বাংলাদেশ ব্যাংককে এখনই হস্তক্ষেপ করা উচিত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে চলতে ব্যাংকগুলোকে বাধ্য করতে হবে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো দ্বারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সুস্পষ্ট নির্দেশনা উপেক্ষা করার এই নজির গ্রাহকরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেন না। এমনই একজন গ্রাহক শামিম হোসেন, যার একটি বেসরকারি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড রয়েছে। তিনি চাকরি করেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। তিনি বলেন, ‘প্রতি মাসের ২০ তারিখ ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধের সময়। প্রথমে খেয়াল করা হয়নি। করোনা-পরবর্তী সময় বিল দিতে বিলম্ব হয়েছে একাধিকবার। যে পরিমাণ টাকা বিল এবং সুদের পরিমাণ, তা তুলনামূলক বেশি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে জানালেও তারা কোনো সদুত্তর দেয়নি।’

বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ক্রেডিট কার্ডের সুদ বা অন্যান্য চার্জ সম্পর্কিত স্পষ্ট নির্দেশনা আছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। নির্দেশনার বাইরে কোনোভাবেই সুদ আরোপ করতে পারবে না কেউ। কোনো ব্যাংক যদি সেটি করে থাকে এবং কোনো গ্রাহক যদি অভিযোগ দেন বাংলাদেশ ব্যাংক পদক্ষেপ নেবে।

সর্বশেষ খবর