রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া বস্তাবন্দি অজ্ঞাত যুবকের লাশের পরিচয় পেয়েছে পুলিশ। তার নাম হাবিবুর রহমান রুবেল (২৮)। হাত-পা বাঁধা ও চটের বস্তার ওপরে তোশক দিয়ে মোড়ানো রুবেলের লাশ উদ্ধারের ৩৬ ঘণ্টার মধ্যেই হত্যাকারী মনির হোসেনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মনির পুলিশের কাছে ঘটনার বিষয় স্বীকার করে খুনের বর্ণনা দিয়েছে।
পুলিশ জানায়, রুবেলের আপন চাচাতো ভাই মনির। জমিজমা ও পারিবারিক বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকাে র ঘটনা ঘটে। গতকাল রাজধানীর খিলগাঁও থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার সংবাদ পেয়ে সিপাহীবাগ আইসক্রিম ফ্যাক্টরির গলির প্রশান্তি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের বিপরীত পাশের গলিতে অজ্ঞাত যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় লোকজন ও নিহতের স্ত্রী শারমিন আক্তার লাশটি রুবেলের বলে শনাক্ত করেন। প্রাথমিকভাবে লাশের মাথায় আঘাতের চিহ্ন দেখে এটি একটি হত্যাকা বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়। এ বিষয়ে নিহতের মা মিনু বেগম খিলগাঁও থানায় হত্যা মামলা করেন। সংশ্লিষ্ট এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় এ মামলার রহস্য উদঘাটন ও ঘটনার সঙ্গে জড়িত মনিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ কর্মকর্তা হায়াতুল বলেন, যেখানে মৃতদেহ পাওয়া যায়, তার পাশেই মনির হেয়ার স্টাইল নামে মনিরের একটি সেলুন রয়েছে। তাদের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। সেখানে জমিজমা ও পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল। রুবেল নেশা করত। প্রায় দুই মাস আগে রুবেল হুমকি দিয়ে মনিরের কাছে টাকা দাবি করে এবং ১৫ দিন সেলুন বন্ধ রাখতে বাধ্য করে। পরবর্তীতে রুবেল ১২ হাজার টাকা নিয়ে সেলুন খুলতে দেয়। এ ঘটনা ও জমিজমার পূর্ব বিরোধের জেরে রুবেলের ওপর ক্ষিপ্ত ছিল মনির। সে রুবেলকে শায়েস্তা করার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে। বুধবার রাতে রুবেল মনিরের দোকানে চুল কাটার জন্য আসে। মনির তখন অন্য কর্মচারীদের ছেড়ে দিয়ে রুবেলের চুল কাটতে শুরু করে। চুল কাটার ফাঁকে সুযোগ বুঝে মনির রুবেলের ঘাড়ে বৈদ্যুতিক শক দেয়। রুবেল অচেতন হয়ে পড়লে মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য সেলুনে থাকা হাতুড়ি দিয়ে মাথায় একের পর এক আঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর সে দোকানের শার্টার বন্ধ করে মেরাদিয়া থেকে ৬৫০ টাকা দিয়ে একটি তোশক ও দড়ি কিনে নিয়ে আসে। তার দোকানে থাকা একটি বস্তায় লাশ ভরে তোশকে পেঁচিয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে। পরে মৃতদেহটি কিছুদুর টেনে ফেলে দিয়ে আসে। তিনি আরও বলেন, মনিরের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সেলুন থেকে হত্যাকাে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক তার, হাতুড়ি ও রুবেলের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতের প্রাথমিক স্বীকারোক্তি, উদ্ধারকৃত আলামত, তোশক বিক্রেতার স্বীকারোক্তি ও আশপাশে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনায় জানা যায় গ্রেফতারকৃত মনিরই এই হত্যাকান্ডে জড়িত।