ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তৃতীয় ধাপে আগামীকাল দেশের ৯০টি উপজেলায় ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। পূর্ববর্তী দুই ধাপের মতো তৃতীয় ধাপেও ব্যবসায়ী প্রার্থীদের প্রাধান্য লক্ষণীয়। প্রার্থীদের প্রায় ৬৭ শতাংশই ব্যবসায়ী। কোটিপতি প্রার্থী ১০৬ জন। প্রার্থীদের মধ্যে আয় বৃদ্ধিতে সবার ওপরে আছেন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার চেয়ারম্যান প্রার্থী নুরুল আলম। গত পাঁচ বছরে তার আয় বেড়েছে ১০ হাজার ৪২২ শতাংশ। প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রার্থীদের হলফনামায় অস্থাবর সম্পদের যে হিসাব দেওয়া হয়েছে তার ভিত্তিতে কোটিপতির হিসাব করা হয়েছে। ভূমির মতো স্থাবর সম্পদের মূল্য নির্ধারণ কঠিন হওয়ায় তা কোটিপতির হিসাবে আনা হয়নি। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে ৯০ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১১ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে পাঁচজন কোটিপতি প্রার্থী রয়েছেন।
টিআইবির পর্যবেক্ষণে বলা হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও ব্যবসায়ী প্রার্থীদের দাপট বাড়ছে। অন্যদিকে কৃষিজীবী ও শিক্ষকতায় যুক্ত প্রার্থীদের সংখ্যা কমছে। তৃতীয় ধাপে চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ৬৬ দশমিক ৫৩ শতাংশই নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ পেশা হিসেবে দেখিয়েছেন কৃষিকাজ। পেশার ক্ষেত্রে তৃতীয় ও চতুর্থ অবস্থানে রয়েছেন আইন পেশা (৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ) ও শিক্ষকতা (৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ)। একইভাবে ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদেরও ৬৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ নিজেদের ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের ৪৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ গৃহিণী। গৃহস্থালির কাজকে তারা পেশা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাদের প্রায় ৩২ শতাংশ পেশায় ব্যবসায়ী।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় আসছেন কি না এবং মুনাফা করার উদ্দেশ্যে আসছেন কি না, সেটিই বড় প্রশ্ন। তথ্য বলছে, জনপ্রতিনিধি হিসেবে ক্ষমতায় থাকলে অনেকের আয় ও সম্পদ অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। ফলে জনস্বার্থের বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, বৈধভাবে আয় বৃদ্ধি পাবে, এটাই প্রত্যাশিত। কিন্তু ক্ষমতায় থাকলে অস্বাভাবিকভাবে আয় ও সম্পদ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। অস্বাভাবিক আয় বৃদ্ধির বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। এদিকে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েও মন্ত্রী ও এমপিদের স্বজনদের অংশগ্রহণ থামাতে পারেনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তৃতীয় ধাপে এমপি-মন্ত্রীদের ১৮ স্বজন অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে একজন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। অন্যদিকে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে তৃতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় ৫৫ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। এর মধ্যে ৫১ জন শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে আছেন।
সবচেয়ে বেশি আয় বেড়েছে কক্সবাজারের নুরুল আলমের : ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তুলনায় আয় বৃদ্ধির দিক দিয়ে সবার ওপরে কক্সবাজারের টেকনাফের চেয়ারম্যান নুরুল আলম। তার আয় বেড়েছে ১০ হাজার ৪২২ শতাংশ। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা খাগড়াছড়ির মহালছড়ির বিমল কান্তি চাকমার আয় বেড়েছে ১ হাজার ২৭৫ শতাংশ। ১ হাজার শতাংশের ওপরে আয় বৃদ্ধি পাওয়া প্রার্থী রয়েছেন আরও চারজন। তারা হলেন- পটুয়াখালীর দুমকীর চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশীদ হাওলাদার, বগুড়ার শাজাহানপুরের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান শান্তা আক্তার এবং শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগম।
অস্থাবর সম্পদের শীর্ষে নরসিংদীর ফেরদৌসী : প্রার্থীদের মধ্যে অস্থাবর সম্পদের তালিকায় শীর্ষে আছেন নরসিংদীর শিবপুরের চেয়ারম্যান প্রার্থী ফেরদৌসী ইসলাম। তার মোট অস্থাবর সম্পদ ১৭৪ কোটি ১১ লাখ টাকা। তিনি সংসদ সদস্য সিরাজুল ইসলাম মোল্লার স্ত্রী। তালিকার দুই নম্বরে আছেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর জাহেদুল হক, তার সম্পদ ৩১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। তৃতীয় অবস্থানে আছেন ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার প্রার্থী মোখলেছুর রহমান। তার অস্থাবর সম্পদের মূল্য ১৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধিতে শীর্ষে টাঙ্গাইলের মাহমুদুল হাসান : গত পাঁচ বছরে অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধিতে উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা পেছনে ফেলেছেন সংসদ সদস্যদের। একজন সংসদ সদস্যের অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধির হার সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৬৫ শতাংশ। সেখানে গত পাঁচ বছরে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ারের চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসানের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৯ হাজার ৮৫০ শতাংশ। অস্থাবর সম্পদের ভিত্তিতে ২০১৯ সালের তুলনায় ১০০ শতাংশ বা তার বেশি সম্পদ বেড়েছে ৮৫ জন প্রার্থীর। এ তালিকার শীর্ষ দশের মধ্যে সাতজনই মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান। দ্বিতীয় অবস্থানে কিশোরগঞ্জের তারাইলের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নার্গিস সুলতানা, তার সম্পদ বেড়েছে ৬ হাজার শতাংশের বেশি। শীর্ষ দশে থাকা প্রত্যেকেরই অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে অন্তত দেড় হাজার শতাংশের বেশি।
গত ১০ বছরে আয় বৃদ্ধিতে শীর্ষে ঝালকাঠির এমাদুল হক : ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তুলনায় সর্বোচ্চ আয় বেড়েছে ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী মো এমাদুল হকের। গত ১০ বছরে তার আয় বেড়েছে ২ হাজার ৮৮৯ শতাংশ। পরের অবস্থানে আছেন বরিশালের আগৈলঝাড়ার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকুল ইসলাম তালুকদার, তার আয় বেড়েছে ২ হাজার ২৩১ শতাংশ। তিন নম্বরে আছেন সাতক্ষীরার কলারোয়ার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী আমিনুল ইসলাম লাল্টু, তার আয় বেড়েছে ১ হাজার ৮০৮ শতাংশ।
আইনি সীমার বেশি জমি ছয় প্রার্থীর : আইন অনুযায়ী, একজন নাগরিক সর্বোচ্চ ১০০ বিঘা বা ৩৩ একর জমির মালিক হতে পারেন। এই আইন লঙ্ঘন করেছেন ছয় প্রার্থী। তারা হলেন- সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আশিদ রাজা চৌধুরী, তার জমির পরিমাণ ২৮০ একর। গাইবান্ধার সাদুল্যাপুরের চেয়ারম্যান প্রার্থী রেজাউল করিমের জমির পরিমাণ ২৬৭ দশমিক শূন্য ৬ একর। নওগাঁর রানীনগরের চেয়ারম্যান প্রার্থী রাহিদ সরদারের জমির পরিমাণ ৬৫ দশমিক ৩৬ একর। চট্টগ্রামের পটিয়ার মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সাজেদা বেগমের জমির পরিমাণ ৬০ একর। কিশোরগঞ্জের ইটনার ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী সিব্বির মাহমুদের জমির পরিমাণ ৪০ একর এবং ফেনীর সোনাগাজীর চেয়ারম্যান প্রার্থী জহির উদ্দিন মাহমুদের জমির পরিমাণ ৩৪ দশমিক শূন্য ৯ একর। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) সুমাইয়া খায়ের, আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের পরিচালক মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, অ্যাসিস্ট্যান্ট কো-অর্ডিনেটর ইকরামুল হক ও ডেটা ভিজুয়ালাইজেশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কো-অর্ডিনেটর কে এম রফিকুল আলম। হলফনামা বিশ্লেষণের তথ্য তুলে ধরেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের ডেটা ভিজুয়ালাইজেশনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কো-অর্ডিনেটর রিফাত রহমান।
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        