রবিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:০০ টা

সেই অস্ত্রবাজরা যুক্তরাজ্য ভারতে

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

সেই অস্ত্রবাজরা যুক্তরাজ্য ভারতে

যুক্তরাজ্যে পালিয়েছেন এম এ মান্নান, রুহুল আমিন ওরফে শিবলু, আফতাব হোসেন খান ও ভারতে সজল দাস অনীক -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রকাশ্যে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শনকারী নেতারা ‘হাওয়া’ হয়ে গেছেন। শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর এসব অস্ত্রধারী নেতা-কর্মীর অনেকের বাড়িতে হামলা করেছেন বিক্ষুব্ধ জনতা। এরপর থেকে তাদের অবস্থান নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। পরবর্তীতে তাদের দেশত্যাগের বিষয়টি আলোচনায় আসে। অস্ত্রধারী নেতা-কর্মী ও ক্যাডারদের অনেকেই এখন ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থান করছেন। অস্ত্রধারীরা পালালেও তাদের প্রদর্শিত অস্ত্রের খোঁজ পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও যৌথ বাহিনী।

সূত্র জানায়, সিলেটে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিভিন্ন বলয়ে বিভক্ত ছিলেন। নিজেদের বলয়ের প্রভাব ও শক্তি বাড়াতে গেল দুই বছরে তারা অস্ত্র মজুত শুরু করেন। ভারতীয় চিনি ও গরুর অবৈধ ব্যবসার মাধ্যমে ‘কাঁচা টাকা’ হাতে আসায় অস্ত্র কেনা তাদের জন্য সহজ হয়ে যায়। চিনি ও গরু চোরাকারবারিদের মাধ্যমে তারা বেশির ভাগ অস্ত্র ভারত সীমান্ত দিয়ে নিয়ে আসেন। এ ছাড়া গত ১৫ বছরে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতা লাইসেন্স নিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র কেনেন। তবে অবৈধ অস্ত্রগুলো এত দিন প্রকাশ্যে ব্যবহার হয়নি। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ১৮ জুলাই নগরের আখালিয়া এলাকায় পুলিশের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালান আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এ সময় অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্যে গুলি ছুড়েন তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা। পরবর্তীতে ৪ আগস্ট সিলেট নগরের কোর্ট পয়েন্টে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ছাত্র-জনতা অবস্থান নিলে তাদের হটাতে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ক্যাডাররা অস্ত্রের মহড়া দেন। অস্ত্র হাতে তারা কোর্ট পয়েন্ট থেকে ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করে দেন।

ওইদিন সদ্য সাবেক সিটি মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত যুক্তরাজ্য প্রবাসী যুবলীগ নেতা রুহুল আমিন ওরফে শিবলু আহমদের হাতে দেখা যায় অত্যাধুনিক একটি আগ্নেয়াস্ত্র। যেটি অত্যাধুনিক এম-১৬ রাইফেল বলে দাবি করছেন অনেকে। ৫ আগস্টের পর তিনি কৌশলে যুক্তরাজ্য ফিরে গেছেন। কিন্তু তার অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রটি এখনো উদ্ধার হয়নি। এ ছাড়া ৪ আগস্ট যাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র দেখা গেছে তাদের মধ্যে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট রণজিৎ সরকার, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খান, মহানগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম এ হান্নানও বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ, মহানগরের সাধারণ সম্পাদক নাঈম আহমদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহসভাপতি পীযূষ কান্তি দে, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সজল দাস অনিক বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।  সিলেটে গুঞ্জন রয়েছে, অস্ত্রধারীদের দেশ থেকে যারা পালাতে সহায়তা করেছেন তাদের জিম্মায়ই রয়ে গেছে অস্ত্রগুলো। হাতবদল হওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও অস্ত্রগুলোর অবস্থান শনাক্ত করতে হিমশিম খাচ্ছে।  অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের গণমাধ্যম কর্মকর্তা, অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, ভিডিও ও ছবি দেখে অনেক অস্ত্রধারীর পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তারের পাশাপাশি প্রদর্শিত অস্ত্রগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।

সর্বশেষ খবর