বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য রাজনৈতিক প্ল্যাটফরম ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’র সাংগঠনিক কার্যক্রম এগিয়ে চলছে বেশ জোরেশোরে। ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে ৫ আগস্টের ঐতিহাসিক পটপরিবর্তনের এক মাস পর ৮ সেপ্টেম্বর আত্মপ্রকাশ করে ‘জাতীয় নাগরিক কমিটি’। গত দুই মাসে রাজধানী ঢাকার ৩টি থানায় প্রতিনিধি কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলো হলো, যাত্রাবাড়ী, হাতিরঝিল ও পল্লবী। চলতি মাসেই ঢাকার প্রায় সব থানা কমিটি ঘোষণা করা হবে। ঢাকার বাইরে প্রত্যেকটি বিভাগে ৪-৫টি করে থানা কমিটির তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এগুলো ক্রমান্বয়ে প্রকাশ করা হবে। এগুলো প্রকাশ করার মধ্যেই বাকি থানার কমিটিগুলোও তৈরি হয়ে যাবে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল ইসলাম আদিব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সবকটি বিভাগে থানা পর্যায়ে কমিটি গঠনের কাজ শেষ করা হবে। অন্তর্বর্তী সরকার এখনো ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেনি। কিন্তু নির্বাচন সামনে রেখেই জাতীয় নাগরিক কমিটির কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। উদ্যোক্তারা আশা করছেন, নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন দিলে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে নতুন এই রাজনৈতিক দলটি। এদিকে বিগত কয়েক সপ্তাহে রাজনৈতিক ময়দান সরগরম ছিল রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ, রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সংস্কার এবং নির্বাচন ইস্যু নিয়ে। তিনটি ইস্যুতেই বিএনপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য ছিল সর্বাগ্রে লক্ষণীয়। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্য দিলে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের অপসারণের দাবি তোলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। রাষ্ট্রপতি তাঁর শপথ ভঙ্গ করেছেন জানিয়ে অপসারণের দাবি আদায়ে রাজনৈতিক ঐকমত্য গড়ার প্রচেষ্টাও চালায় তারা। কিন্তু বিএনপির ভেটোতে তা আর সম্ভব হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ শেষ করে নির্বাচন দিতে চাইলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে। তারা সভা-সেমিনারে দ্রুত নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি করছেন। গত ১০ নভেম্বর সিলেটের এক অনুষ্ঠানে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, শুধু নির্বাচনের জন্য ২ হাজার মানুষ জীবন দেননি, এ অভ্যুত্থানও হয়নি। দুর্নীতিগ্রস্ত সিস্টেমগুলোর জন্য ১৬ বছর ধরে বিরক্ত হতে হতে মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছিল। সারজিসের এ বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন, ছাত্রদের কর্মকান্ডে মনে হয় দেশটা তারা স্বাধীন করেছে, আর কেউ এখানে অংশগ্রহণ করে নাই। বিএনপিসহ অন্যান্য দলের যে হাজারও লোক জীবন দিয়েছে তার হিসাব কে করবে? তিনি বলেন, ভোট মোটেই সহজ কাজ নয়। এটা জনগণের মৌলিক অধিকার। গণতন্ত্রের প্রতীক। তারা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) গণতান্ত্রিক সমাজ বিনির্মাণ করতে চায় না। তারা মনে করে রাজপথে ২টা মিছিল করলে দেশ ঠিক হয়ে যাবে।