নড়াইলে বসতবাড়িতে অর্ধশতবর্ষী গাছে ফুটেছে দুষ্প্রাপ্য ‘কুরচি’ ফুল। সাদা সাদা ফুলে ভরে আছে পুরো গাছ। গাছটির কাছে গেলেই হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো অচেনা সুগন্ধ মনকে অনেকটা আচ্ছন্ন করে। গাছটি খুব বড় নয়। সব জঞ্জাল দূরে ঠেলে সবুজে-সাদায় মিলে এক শান্ত পরিবেশ তৈরি করেছে গাছটি। সদর উপজেলার বাঁশগ্রামের বাসিন্দা আ. গফফার শেখের বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে ফুটছে কুরচি ফুল। দুষ্প্রাপ্য এ ফুলটির সঙ্গে পরিচয় না থাকলেও নামটি অনেকের কাছে চেনা মনে হতে পারে। কারণ, গাছটি দেশজ ও সংস্কৃতিকাব্যে বহুল উল্লিখিত একটি ফুল। রবীন্দ্রনাথ এ ফুলের রূপে মোহিত হয়ে লিখেছিলেন, ‘কুরচি, তোমার লাগি পদ্মেরে ভুলেছে অন্যমনা/ যে ভ্রমর, শুনি নাকি তারে কবি করেছে ভর্ৎসনা।’ গত বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ১৫-২০ ফুট লম্বা গাছের পুরোটাই ফুলে ভরে গেছে। ঊর্ধ্বমুখী ও এলোমেলো ডালগুলোতে ফুলের ঝাপি খুলে দিয়েছে কেউ।
জানা যায়, শীতকালে এদের সব পাতা ঝরে পড়ে। ফাল্গুনের শেষ থেকে দু-এক স্তবক কচি পাতার সঙ্গে ফুল ফুটতে শুরু করে। যা থাকে প্রায় বর্ষা পর্যন্ত। তবে শরৎ পর্যন্তও ফুটতে দেখা যায়।
বাড়ির মালিক প্রয়াত আ. গফফার শেখের মেয়ে মিলি বেগম (৫০) জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি গাছটিকে দেখছেন। তার বড় বোন রিমি বেগম প্রায় ৫০ বছর আগে স্কুলের এক বান্ধবীর কাছ থেকে উপহার পেয়ে গাছটি লাগিয়েছিলেন। এ অঞ্চলে কুরচি ফুলের গাছ আরও আছে বলে জানা যায়নি। নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক জাহিদুল ইসলাম বলেন, কুরচি স্থানবিশেষ কুটজ বা গিরি মল্লিকা নামেও পরিচিত। গাছটির ইংরেজি নাম ইস্টার ফ্লাওয়ার। এ গাছের স্বাভাবিক উচ্চতা ১০-২০ ফুট। কুরচি ভেষজ গুণাগুণে সমৃদ্ধ। এ গাছের নরম কাঠ দিয়ে পুতুল ও খেলনা তৈরি হয়। আমাদের দেশের শালবন অঞ্চলসহ সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ে এ গাছ প্রচুর জন্মালেও আবাসিক এলাকায় তা দুষ্প্রাপ্য।